ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতি হবে না বাংলাদেশের!
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং রিফর্মস অ্যাডভাইজার' এস কে সুর চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে আমাদের সরাসরি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নেই। এ কারণে আমাদের কোনও ভয় নেই।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আগের অবরোধের কারণে ইরানের সঙ্গে আমাদের সরাসরি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এতদিন হতোই না। আমরা আশা করেছিলাম, ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ পুরোপুরি উঠে যাবে। আমরাও ইরানের সঙ্গে সরাসরি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করব। সে পথেই যাচ্ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর আবারও অবরোধ দিয়েছে। তবে এতে আমাদের কোনও সমস্যা হবে না।’
গত ৮ মে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক অবরোধের ঘোষণাও এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে। ওইদিন হোয়াইট হাউসের ডিপ্লোমেটিক কক্ষে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে পারে। ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে এই চুক্তিটি করা হয়েছিল।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরমাণু কর্মসূচি চালানোর কথা বলে তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে বলে অভিযোগ ছিল পশ্চিমাদের। এ কারণে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তবে বারাক ওবামা প্রশাসনের নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট ২০১৫ সালে এই চুক্তির মাধ্যমে তেহরানকে সেই ‘সন্দেহজনক’ কর্মসূচি থেকে ফিরিয়ে আনে। ইরানের সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক’ চুক্তিটিতে সই করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ— যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া এবং জার্মানি। চুক্তির আওতায় পরমাণু কর্মসূচি ‘সীমিত’ করার বিনিময়ে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ থেকে মুক্তি পায় ইরান।
জানা গেছে, পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাংলাদেশের পাটপণ্যসহ অন্যান্য রফতানির জন্য ইরানকে একটি ট্রানজিট দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইরানের স্থানীয় বাজারে কার্পেট শিল্প ঐতিহ্যবাহী হওয়ায় সেখানে পাটের সুতা কাঁচামাল হিসেবে যায়। বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৯ হাজার টন পাটের সুতা (ইয়ার্ন) ইরানে রফতানি হয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে দেশটিতে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার টন সুতা।
এছাড়া, ইরানকে সামনে রেখে এশিয়ার নয়টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু)। আঞ্চলিক সহযোগিতা সুনিশ্চিত করতে ১৯৭৪ সালে এই অর্থ বিনিময় ব্যবস্থা ইউনাইটেড নেশনস ইকোনোমিক কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়। তেহরানে এর সদর দফতর।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘আগেও ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছিল। তখন ইরানের পাশে কেউ ছিল না। তখনও আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় লেনদেন করেছি। বিশেষ করে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে তখন ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া আমাদের সহযোহিতা করেছে।’ তিনি বলেন, ‘নতুন করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলেও ইউরোপের ব্যাংকগুলো ইরানের সঙ্গে থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারতীয় এবং ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন করা যাবে। কাজেই নতুন করে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তবে এক্ষেত্রে ভারত ও ইউরোপের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা জোড়ালো থাকতে হবে।’
জানা গেছে, প্রথমে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ইরান ও শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয়ে আকু গঠিত হয়। এরপর মিয়ানমার, ভূটান ও মালদ্বীপ এতে যুক্ত হয়। এসব দেশের আমদানি-রফতানির যে বিল হয়, তা আকুর মাধ্যমে পরিশোধ হয়। প্রতি দুই মাস পরপর এই বিল পরিশোধ হয়ে থাকে। আকুভুক্ত দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের অর্থ লেনদেনে কেবল ডলার চালু ছিল। পরে ডলারের পাশাপাশি ইউরো ও জাপানি মুদ্রা ইয়েনকে যুক্ত করা হয়েছে আকুতে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/মে ১৭, ২০১৮)