রমজান প্রতিদিন
চোখের রোজা
এ. কে. এম মহিউদ্দীন, দ্য রিপোর্ট: মঙ্গবার রমজানের ১২ তম দিন। মাগফেরাতের দ্বিতীয় দিবস। মুমিন জীবনের সব থেকে আনন্দের বিষয় হচ্ছে তার পরওয়ারদেগার তাকে ক্ষমা করে দিবেন। এ জন্য শুধু এই দশদিন নয়, বাকি সবগুলো রোজা তার হক অনুয়ায়ী আদায় করা উচিত। আর এটা খুব করে মনে রাখতে হবে, এমন হতে পারে অনেকের জীবনে; যারা আর আগামী বছর এই সৌভাগ্যমান মাসটি নাও পেতে পারেন। সুতরাং শেষ মওকা হিসেবে নিয়ে সিয়াম সাধনায় নিজেকে সার্বিকভাবে নিবেদন করা দরকার। সর্বাঙ্গে রোজা পরিপালন না হলে রোজাকে উপোসে পরিণত করার কোন মানে হয় না। সুতরাং নিজের ভেতরকার চেতনগুরুরটাকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
পূর্বে এই কলামে আমরা অন্তরের রোজা ম্পর্কে আলোকপাত করেছি। আজ আমরা চোখের রোজা বা চোখের সর্বোত্তম ব্যবহার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব। এটা ঠিক যে, মানুষের মূল্যবান চোখ রাব্বুল আলামিনের শ্রেষ্ঠ উপহার। চোখের রঙিন দৃষ্টিতে দুনিয়ার সব কিছুর প্রকৃত রূপ-রং ধরা পড়ে। এ চোখের দৃষ্টিতে আমরা সুন্দর কুৎসিত, ভালো-মন্দ, উত্থান-পতন, নগ্নতা-বর্বরতা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী কত কি দেখি। আবার এ চোখের দৃষ্টি দিয়েই কোরআনুল হাকিম পড়ি। মানুষের পঞ্চইন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ অন্যতম। অন্তঃকরণকে ভেতরে ও বাইরে সঠিক পথ দেখায় চোখের দৃষ্টি। চোখের বক্র ইশারা (অপব্যবহার) ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্পর্কে তিনি অবহিত (আল মুমিন, আয়াত:১৯)।
চোখের দৃষ্টিকে সঠিকভাবে পরিচালনা না করলে মানুষের অন্তর নোংরা হয়ে যায়। কলব ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষ পশুর চেয়ে নিম্নস্তরে অবস্থান করে। বিবেকহীন হয়, নানারকম অপরাধে লিপ্ত হয়ে পড়ে। মানসিক অশান্তি বেড়ে যায়, নানা বিপদে-আপদে পতিত হয়। নামাজ-রোজা সহিহ হয় না। হাদিসে-কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, দৃষ্টি হচ্ছে ইবলিসের বিষাক্ত তীরগুলোর মধ্যে থেকে একটি তীর। যে ব্যক্তি আমাকে ভয় করে তা ত্যাগ করবে। আমি তার বদলে তাকে এমন ঈমান দান করব, যার মিষ্টি স্বাদ সে নিজের হৃদয়ে অনুভব করবে (তাবারানি)।
পবিত্র রমজান মাসে দৃষ্টির সর্বোত্তম ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রতিটি মুসলমানের জরুরি কর্তব্য। কারণ দৃষ্টির সুন্দরতম ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ যেমন জান্নাতের দরজায় পৌঁছে, তেমনি এর অপব্যবহারের মাধ্যমে জাহান্নামের কিনারায় গিয়ে হাজির হয়।
মূলত চোখের দৃষ্টিই মনের দৃষ্টি। তাই চোখকে মনের আয়না বলা হয়। মানুষ তার মনে যেসব ছবি বা কল্পনা ধারণ করে তার সূত্রপাত তো চোখের দেখার মাধ্যমেই অর্জিত হয়। তাই অবৈধ দৃষ্টিপাত থেকে বিরত থাকতে আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক পুরুষ ও নারীকে গদ্দুল বাসার অর্থাৎ চোখের দৃষ্টি নামিয়ে রাখার আদেশ দিয়েছেন।
আমাদের এ জীবন ক্ষণিকের, একদিন স্বপ্নের ন্যায় ফুরিয়ে যাবে এবং চিরতরে হারিয়ে যাবে এ দৃষ্টিশক্তি। তাই ‘সময় থাকতে কাঁদতে হবে; আয়ু হচ্ছে ক্ষয়। কাঁদলে কল্ব সাফ হয়, কাঁদলে গোনাহ মাফ হয়। ইবাদতের মৌসুম এ রমজান মাসে কেঁদে কেঁদে (তওবা করে) আল্লাহ্র দরবারে গোনাহ মাফ চাইলে তিনি আমাদের প্রতি খুশি হয়ে যেতে পারেন। তাই রমজান মাসেই আমাদের চোখের দৃষ্টির কল্যাণকর ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নেয়ার মোক্ষম সময়।
সর্বাবস্থায়ই আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা খোদাতায়ালার সদাজাগ্রত দৃষ্টির সামনে রয়েছি, তাহলে দুনিয়ার অসংখ্য পাপ ও বিপদ থেকে আমরা রক্ষা পাব। ইমাম আবু হামিদ আল গাজালি (র.) বলেছেন, ‘যে পর্যন্ত তুমি নিজের চোখকে হারাম বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত থেকে বিরত রাখতে না পারবে, সে পর্যন্ত নিজেকে পাপ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না।’
আসুন, শয়তানি ও কুপ্রবৃত্তিজনিত অশ্লীল চাহনি থেকে নিজেদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করে আমরা ঈমানি বলে বলীয়ান ও উন্নত দৃষ্টির অধিকারী হই। আল্লাহর সৃষ্টিকে আমাদের সুদৃষ্টি দিয়ে মর্মে মর্মে অনুধাবন করি। চোখের দৃষ্টিতে ও মনের দৃষ্টিতে একাকার হয়ে পবিত্র রমজানে বেশি বেশি ইবাদত করি। প্রাণভরে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তিনি তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তঃকরণ, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর (সুরা নাহল, আয়াত:৭৮)। হজরত আলী বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার চোখের ওপর জয়ী হতে পারে না তার অন্তঃকরণের কোনো মূল্য নেই। (নাহজ আল বালাগ)
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ মে ২৯,২০১৮)