কাউন্সিলর একরাম 'হত্যার' অডিও: সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড়
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: বাংলাদেশের টেকনাফে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সেখানকার পৌর কাউন্সিলর ও স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে রেকর্ডকরা অডিও প্রকাশ হওয়ার পর ঘটনা নিয়ে সামাজিক নেটওয়ার্কে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।
বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমেও তা প্রকাশ হয়েছে।
মাদক বিরোধী অভিযানে কক্সবাজারের টেকনাফে গত ২৬শে মে মি. হক নিহত হন।
তাঁকে বাসা থেকে র্যাব এবং ডিজিএফআই এর স্থানীয় দু'জন কর্মকর্তা ডেকে নেওয়ার পর হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে।
এদিকে, র্যাব বলেছে, প্রকাশ হওয়া অডিও খতিয়ে দেখছে বাহিনীটির সদর দপ্তর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর গুলিবর্ষণের অন্যান্য ঘটনার মতো এই ঘটনাও তদন্ত করা হবে।
মাদক বিরোধী অভিযানে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে অডিও ইউটিউবে প্রকাশ হওয়ার পর তা সামাজিক নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়েছে।
তার পরিবার বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার সময়কার ফোনকলের এই অডিও সাংবাদিকদের শুনিয়েছে।
সেই অডিওতে শোনা যাচ্ছে যে, একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনার সময় এবং তার আগমুহুর্তে ঘটনাস্থলে মোবাইল ফোনে তিনবার কল এসেছিল।
শেষ ফোন কলটি রিসিভ হলেও ঘটনাস্থল থেকে ফোনটিতে কেউ উত্তর দিচ্ছে না।
যিনি ফোন করেছেন, প্রথমে তার কিছুটা কথা আছে। কিন্তু পরে ঘটনাস্থল বা সেই প্রান্ত থেকে একটা ভয়াবহ পরিবেশের চিত্র পাওয়া যায় এই অডিওতে।
একরামুল হকের স্ত্রী আয়শা বেগম বিবিসিকে বলেছেন,ঘটনার আগমুহুর্তে তার দুই মেয়ে প্রথমে মি: হকের মোবাইল ফোনে কল করে তার সাথে অল্প সময় কথা বলেছিল। এই কথোপকথনে পরিস্থিতি গুরুতর মনে হওয়ায় সাথে সাথে আয়শা বেগম নিজে ফোন করেন।
তার ফোন কলটি রিসিভ করা হয়, কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে কোনো জবাব পাননি। তিনি গুলি এবং ঘটনাস্থলের সব শব্দ শুনতে পেয়েছেন।
"আমার মেয়ে কথা বলেছিল ওর আব্বুর সাথে। তারপর মেয়ে বললো, আম্মু আব্বুকে কান্না কান্না গলায় কথা বলছে। তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিলাম। আবার ফোন দিলাম।সেখানে আমার হাসবেন্ড বলতেছে, লোকটি নাজিরপাড়ার লোক হবে, আমি না। তারপর র্যাব একজন বলতেছে, এটাতো এটা না। আরেকজন র্যাব বলতেছে, আপনারা এটা। তারপরে শ্যুট করে দিছে একজন। তারপরে বলছে, ওনাকে শেষ করেছি। এখন বাইকে শ্যুট করো। তখন গাড়িতে শ্যুট করে দিছে ওনারা।"
"আমার বাচ্চারা কান্না করতেছে যে, আমার আব্বুকে এরকম নির্মমভাবে হত্যা করা হলো কেন? উনিতো কিছু করে নাই।"
আয়শা বেগম প্রকাশিত অডিওতে কন্ঠগুলো তাদের পরিবারের বলে নিশ্চিত করেছেন।
তবে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন, র্যাব সদর দপ্তর এই অডিও খতিয়ে দেখছে।
আয়শা বেগম অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্বামীকে ডিজিএফআই এবং র্যাবের স্থানীয় দু'জন কর্মকর্তা ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে।
"র্যাব দুই মাস যাবৎ জায়গা নেবে বলে আমার হাসবেন্ডকে জায়গা দেখাতে বলতেছে। উনিতো তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। সেই সুবাদে ওনারা বলতেছে, আপনার পরিচিত থাকবে, আমাদের একটা জায়গা দেখান। অনেকবার জায়গা দেখতে গেছে র্যাবরা। জায়গাও দেখছে।"
তিনি আরও বলেছেন, "এই জায়গা দেখার কথা বলে সেদিন ২৬ তারিখে র্যাবও ফোন করছিল। আর টেকনাফের ডিজিএফআই এর মেজরও ফোন করছিল ওনার কাছে। দুপুর থেকে ডাকতেছে। বলতেছে যে, আসেন না। উনি বলছে,আমি আপনাদের বলছি না যে দুপুরের পর আসবো।"
"ওরা ফোন করে করে ডাকছে। বলছে আসতে হবে। তারপর তারাবির পর ওনাদের কাছে গেছে। এভাবে কেন আমার স্বামীকে খুন করা হলো?"
ডিজিএফআই এর একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও কোন মন্তব্য করেননি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, অডিও তিনি শোনেননি। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর গুলিবর্ষণের অন্যান্য ঘটনা যেভাবে তদন্ত হয়, এটিও সেভাবে তদন্ত হবে।
"দেখুন ঐ অডিও আমি শুনিনি।আমি না দেখেতো বলতে পারবনা যে, কি অডিও বের হয়েছে। এটা আমরা সবসময় বলছি, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বা অন্যায়ভাবে কিছু করে থাকে, তারতো একটা ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল এনকোয়ারি হচ্ছে এবং হবে। সেখানে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তারও বিচার হবে। সেটা আমরা সবসময় বলে আসছি। কিন্তু এটা অডিও না দেখে আমি বলতে পারবোনা।"
কিন্তু একরামুল হকের পরিবার অভিযোগ করেছে, র্যাব এবং ডিজিএফআই এর স্থানীয় দু'জন কর্মকর্তা তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। প্রকাশিত অডিওতেও একরামুল হকের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকার দাবি করা হয়েছে।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন,"অভিযোগ নেই, সেগুলো আমরা এখন, মানে আমার জানামতে, তার তিনটি- মাদক অধিদপ্তর থেকে যে লিস্ট বানিয়েছে, সেটার ভেতরে তার নাম আছে। সেটাও আমি দেখেছি। আরও একটি সংস্থার লিস্টে তার নাম ছিল। এ সবগুলো নিয়ে তদন্ত হবে। তারপর বলতে পারবো যে, কে দোষী?"
তবে কক্সবাজারের এই ঘটনা আলাদাভাবে তদন্ত হবে কিনা, সেই প্রশ্নে তিনি বলেছেন, "এটা সব গুলিবর্ষণের ঘটনাতেই তদন্ত হয়।"
একরামুল হক স্থানীয় যুবলীগেরর সভাপতি ছিলেন দীর্ঘসময়।
কক্সবাজারের পৌর মেয়র এবং সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী এর আগে ঘটনার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন।
তিনি বিবিসিকে বলেছেন, তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান।
তিনি মনে করেন, "এ ধরণের ঘটনার ঘটিয়ে মাদকবিরোধী পুরো অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।" দ্য রিপোর্ট/টিআইএম/১ জুন,২০১৮