খুলনা ব্যুরো : খুলনায় মাদাকাসক্ত এক ব্যক্তিকে ধরতে না পেরে তার স্ত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশের দাবি, স্বামীকে পালালোর সুযাগ করে দেওয়া এবং দরজা খুলতে দেরি করায় কিছু পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে মাদাকাসক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর ওপর চড়াও হন এবং তাকে থানায় নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তার সুপারিশে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার (২৯ মে) বিকালে খুলনা মহানগরীর কেন্দ্রস্থল জনবহুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে সামাজিক অবস্থান এবং লোকলজ্জার ভয়ে মামলা দায়ের করেনি অভিযুক্তের পরিবার।

জানা গেছে, নগরীর ময়লা পোতাস্থ এই বাসায় ২৯ মে খুলনা সোনাডাঙ্গা মডেলে থানার একটি টিম অভিযান চালায়। এ সময় কলাপসেবল গেট খুলতে দেরি হওয়ায় মাদকাসক্ত বলে অভিযুক্ত রাসেলের স্ত্রীর গায়ে পুরুষ পুলিশ হাত তোলেন। এমনকি বোরখার ভেতর মাদক আছে বলে নেকাব ছিড়ে দেহ তল্লাশীর নামে শ্লীলতাহানি করেন। তারপর তার স্ত্রীকে বাসা হতে টেনে হেঁচড়ে সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটক রাখা হয়। রাসেলের স্ত্রী একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের ছাত্রী।

রাসেলের অভিযোগ, তার নামে কোন মামলা নেই তবে গত কয়েক বছর ধরে ঈদের সময় আসলেই পুলিশ তার বাসায় এই ধরনের অভিযান চালায়।

রাসেলের স্ত্রীর অভিযোগ, পুলিশ তার মুখের নেকাব টেনে ছিড়ে ফেলেছে।

পুলিশেরে শ্লীলতাহানী এবং মারাধরের ঘটনায় সেই রাতে রাসেল তার স্ত্রীকে নিয়ে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালের রশিদের বিধি-বিধান মোতাবেক পুলিশ কেস হিসাবে সিলও দেওয়া হয়।

রাসেল জানান, এ ঘটনার পর তিনি আদালতে মামলা করার জন্য আইনজীবীর কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু আইনজীবী বর্তমানে পুলিশের ব্যাপক ক্ষমতা এবং হয়রানির অশঙ্কায় মামলা করা থেকে পিছু হটেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক দ্য রিপোর্টকে জানান, গত ২৯ মে সন্ধ্যায় সোনাডাঙ্গা থানার মাদক বিরোধী অভিযানে পুলিশ মাদকসেবী হিসাবে পরিচিত ময়লাপোতা ডা: নাসিমের পুত্র রাসেলকে ধরতে তার বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের পরিচয় পাওয়ার পরও ঘরে দরজা খুলতে দেরি করা হয়। পরে পুলিশ ঘরে ঢুকে দেখতে পায় রাসেলকে পিছনের গেট দিয়ে পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এই সময় কিছু পুলিশ উত্তেজিত হয়ে রাসেলের স্ত্রীকে আটক করে সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে আসে। পরে তার স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, রাসেল মাদকসেবী এবং সেখানে পুলিশ কর্মকর্তাদের যাতায়াত করার ঘটনা রয়েছে বলে শুনেছি।

রাসেলের স্ত্রী পুলিশের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি হাস্যকর। কারণ সময়টি ছিল ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত। তিনি দাবি করেন অভিযানে নারী পুলিশ ছিল।

এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাসেলের মাদকের জমজমাট আসরে নিয়মিত পুলিশ কর্মকর্তারাদের হাজির হতে দেখা যায়। আবার পুলিশ প্রায় অভিযানও চালায়।

এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সোনালী সেন জানান, তারা বিষয়টি অভিযোগ আকারে শুনেছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

এদিকে খুলনার নারী নেত্রী শামীমা সুলতালা এ ঘটনা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, একজনের অপরাধে তার স্ত্রীকে শ্লীলতাহানী করা অন্যায়।

তিনি অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

তিনি আরো বলেন, অভিযান মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কিন্তু একজন মাদকসেবীকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে থানায় নিয়ে যাওয়া উচিত নয়।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/জুন ০৩, ২০১৮)