বাজেট উপস্থাপন আজ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ও সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট চূড়ান্ত করেছে সরকার। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে এটি হচ্ছে বর্তমান সরকারের এই মেয়াদের শেষ বাজেট। বৃহস্পতিবার (৭ জুন) বেলা সাড়ে ১২টায় জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেট পেশ হওয়ার পর দীর্ঘ আলোচনা শেষে তা পাস হবে আগামী ২৮ জুন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে এবারের বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন, অবকাঠামো খাতসহ সরকারের ১০ মেগা প্রকল্প। এসব খাতের উন্নয়নে থাকছে বিশেষ বরাদ্দ।
জানা গেছে, এবারের বাজেটের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে চার লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার কমবেশি। যেহেতু এবারের বাজেটে নতুন করে কোনও করারোপ করা হচ্ছে না সেহেতু বাজেট ব্যয়ের এ পরিমাণ শেষ মুহূর্তে আরও কিছুটা কমিয়ে আনা হতে পারে বলেও ধারণা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এ বছরের এডিপি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় জাতীয় সংসদে নতুন বাজেট উত্থাপনের আগে সংসদ ভবনের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নতুন বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। বৈঠকে মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন। এর পরপরই মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া নতুন বাজেটে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনিও বৃহস্পতিবার বঙ্গভবন ছেড়ে সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে অফিস করবেন। এর পরেই বাজেট ডক্যুমেন্টসসহ ব্রিফকেস হাতে অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তা উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
নতুন বাজেটের আকার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৬৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা বেশি। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এর আকার ৯৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটের আকার তিন লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অর্থমন্ত্রী বৈদেশিক উৎস থেকে মোট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন ৬০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১০ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ খরচ হবে। সরকারের নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা। ঘাটতির বাকি ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা নেওয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বাকি তিন হাজার কোটি টাকা অন্যান্য উৎস হতে।
জানা গেছে, নির্বাচনের বছর এটি। তাই এবারের বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পে-স্কেল অনুযায়ী ৫ শতাংশেরও বেশি হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা থাকছে। থাকছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ সম্মাননা ভাতা। ভোটারদের টানতে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়কে ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৮৬ লাখ করা হয়েছে। সরাসরি এ খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ছে ১১ লাখ মানুষ।
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নতুন বাজেটে নতুন কোনও করারোপ করা হচ্ছে না। কর কর্মকর্তাদের মানসিকতা পরিবর্তনের পাশাপাশি করদাতাদের হয়রানি কমাতে আইন-কানুন সংশোধন করা হয়েছে। তরুণরা করদানে উৎসাহিত হচ্ছে। তাই করহার না বাড়লেও নতুন অর্থবছরে বাড়তি করের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
নতুন অর্থবছরে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি রাখা হচ্ছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। বাজেটে চার হাজার ৫১ কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশা থাকছে। ওই অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতি দাঁড়াবে এক লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
গত ১০ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য ১৭টি খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাতের প্রথমটি হচ্ছে পরিবহন খাতে ৪৫ হাজার ৪৪৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ খাতে ২২ হাজার ৯৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ১৭ হাজার ৮৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়ন এবং অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য চতুর্থ সর্বোচ্চ পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৬ হাজার ৬৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। শিক্ষার প্রসার ও গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা ও ধর্ম খাতে পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৬ হাজার ৬২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১৪ হাজার ২১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, যা ৮ দশমিক ২১ শতাংশ। স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য-পুষ্টি-জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ ১১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি খাতে বরাদ্দ ৭ হাজার ৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। নদী ভাঙন রোধ ও নদী ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে পানি সম্পদ সেক্টরে বরাদ্দ ৪ হাজার ৫৯২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, যা ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মানব সম্পদ উন্নয়নসহ দক্ষতা বৃদ্ধিতে গতিশীলতা আনয়নে জনপ্রশাসন খাতে বরাদ্দ ৩ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
এনইসি সভায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুকূলে ২৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ বিভাগের অনুকূলে ২২ হাজার ৮৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুকূলে ২০ হাজার ৮১৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৭২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ১৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, সেতু বিভাগে ৯ হাজার ১১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ৯ হাজার ৪০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৮ হাজার ৩১২ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ৬ হাজার ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।
( দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ জুন ০৭, ২০১৮)