দ্য রিপোর্ট ডেস্ক:  বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হোয়াইট ওয়াশই হলো আফগানিস্তানের কাছে। ১৪৫ রান করতে চাকা থামল ১৪৪ এ। ১ রানে হারল বাংলাদেশ। আফগানরা শেষ পর্যন্ত ৩-০ তে জিতে নিল সিরিজ।

শুরুর ব্যাটিং ব্যর্থতা ছাপিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম দেখালেন অসাধারণ বীরত্ব। দেরাদুনে পেনডুলামের কাটার মতো দুলতে থাকল ম্যাচের ভাগ্য। কিন্তু তীরে এসে তরী ডুবল। রশিদ খানের শেষ  বলে চার রানের সমীকরণ মেলাতে পারলেন না আরিফুল হক। দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশ সিরিজের তৃতীয় টি-টুয়েন্টি ম্যাচেও হারল ।

সিরিজ হার এড়ানোর সুযোগ শেষ হয়ে গিয়েছিল আগের ম্যাচেই। ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর সুযোগ। কিন্তু টপঅর্ডারের ব্যর্থতায় সেটিও হাতছাড়া হল। টানা তিন ম্যাচ হারের ক্ষত নিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে সাকিব-তামিমদের।

১৪৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে শেষ চার ওভারে দরকার ছিল ৪৮ রানে কঠিন সমীকরণ। ১৭তম ওভারে দুই ছক্কায় ১৫ রান তুলে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান মাহমুদউল্লাহ। রশিদ খান পরের ওভারে মাত্র ৩ রান দিলে আবার কঠিন হয়ে যায় ম্যাচ। মুশফিকের এক জানাতের এক ওভারে ৫টি চার মেরে ম্যাচ নিয়ে এসেছিলেন নিজেদের দিকে। কিন্তু শেষ ওভারে ৯ রানের সহজ সমীকরণ মেলাতে না পেলে বিষাদের হার সঙ্গী হল বাংলাদেশ দলের।

৫৩ রানে চার উইকেট হারানো বাংলাদেশ দল লড়াই করে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক বীরত্বে। শেষ ওভারের প্রথম বলে মুশফিক আউট হলে ভাঙে ৮৪ রানের অনবদ্য জুটি।

মুশফিক করেন ৩৭ বলে ৪৬ রান। মাহমুদউল্লাহ ৩৮ বলে ৪৫ করে শেষ বলে রান আউট হন। শেষ বলটি মোকাবেলা করা আরিফুল ৩ বলে ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। শেষ বলে অল্পের জন্য ছক্কা হয়নি। বাউন্ডারি সীমানায় বল গেলে দৌড়ে তিন রানের বেশি নিতে পারেননি আরিফুল ও মাহমুদউল্লাহ।

স্লগ-ওভারে দারুন বোলিং করে লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই রেখেছিলেন বোলাররা। কিন্তু শুরুর অগোছালো ব্যাটিংয়ে ১৪৬ রানই হয়ে ওঠ অনেক দূরের পথ। মাহমুদউল্লাহ মুশফিক মিলে অবশ্য নাগালেই নিয়ে এসেছিলেন ম্যাচ।

টানা দুই ম্যাচ হারে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি স্পষ্ট হয় লিটন-তামিম-সৌম্যদের ব্যাটিংয়ের ধরণে।

শুরুতেই সাজঘরে ভরসা তামিম। মুজিবের বলে ক্যাচ দেয়ার আগে এ ওপেনার করতে পেরেছেন মাত্র ৫ রান, এক চারে ৬ বলে।

লিটন ও সৌম্য পরে খানিকটা হাত খোলার চেষ্টা করেছেন। তখনই রান আউটে কাটা পড়েন সৌম্য। একটি করে চার-ছক্কায় ১৩ বলে ১৫ রানের ইনিংস তার।

যার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট সৌম্য, সেই লিটনও কাটা পড়েন রান আউটেই। সেটিও সৌম্য ফেরার পরের ওভারেই। যাওয়ার আগে ১৪ বলে ১২ করে যান।

দারুণ এক ছয় মারা সাকিবও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি। এক্সট্রা কাভারে বল ভাসিয়ে ক্যাচ হয়ে থামে তার ৯ বলে ১০ রানের ইনিংস। সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের লড়াইয়ে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।

এদিন আফগানদের ম্যাচের শুরুটা হয়েছিল মোহাম্মদ শাহজাদের ঝড় দিয়ে। শুরুর ওভারেই ১৮ রান তুলে নেওয়া আফগানদের অবশ্য এ ম্যাচে আর বড় স্কোর তুলতে দেয়নি বাংলাদেশ। বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সাকিব আল হাসানের দল প্রতিপক্ষকে আটকে দিয়েছে নাগালের মধ্যেই।

টস জিতে প্রথমে ব্যাট করা আফগানিস্তান নিজেদের ইনিংসে সংগ্রহ করেছে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রান। ম্যাচে তৃতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিবের ১০ হাজার রান আর ৫০০ উইকেট নেওয়ার কীর্তিটা বাংলাদেশের সিরিজ হারের ক্ষতে একটু হলেও প্রলেপ দিয়েছে।

রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ নেমেছিল তিন পরিবর্তন নিয়ে। সাব্বির রহমান, রুবেল হোসেন আর মোসাদ্দেক হোসেনের বদলে নেমেছিলেন আরিফুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ ও আবু জায়েদ রাহি।

তিন পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশ দলের বোলিংয়ের উদ্বোধনটা মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়েই করিয়েছিলেন সাকিব। তবে সেই ওভারেই শাহজাদ তুলে নেন ১৮ রান।

পরের চার ওভারে নাজমুল ইসলাম অপু, অধিনায়ক সাকিব আর আবু হায়দার রনি টেনে ধরেছিলেন আফগানদের রানের চাকা। রনির করা প্রথম ওভারে আঘাত পেয়ে একটু মন্থর হয়ে পড়া শাহজাদকে শেষমেশ ফিরিয়েছিলেন অপুই।

প্রথম টি-টোয়েন্টির বাজে বোলিংয়ে পরের ম্যাচে একাদশেই সুযোগ হয়নি আবু জায়েদের। তবে তৃতীয় ম্যাচে এসে দারুণ বল করে দুই উইকেট শিকার করেছেন ডানহাতি এই পেসার। প্রথম তিন ওভারে দারুণ মিতব্যয়ী থাকলেও শেষ ওভারে একটু খরুচেই ছিলেন আবু জায়েদ।

আরিফুল হক ফিরেই পেয়েছিলেন বোলিংয়ের সুযোগ। আফগান দলনায়ক আজগর স্ট্যানিকজাইকে ফিরিয়ে উইকেটও তুলে নিয়েছেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।

৪৯৯ উইকেট নিয়ে সাকিব দাঁড়িয়ে ছিলেন মাইলফলকের একদম দ্বারপ্রান্তেই। ম্যাচের ১৯তম ওভারে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জ্যাক ক্যালিস ও শহীদ আফ্রিদির পর ১০ হাজার রান ও ৫০০ উইকেটের বিরল ক্লাবে ঢুকেছেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট অধিনায়ক।

এদিন সাকিবদের প্রথম সাফল্য আনতে অষ্টম ওভার লেগে যায়। মোহাম্মদ শাহজাদকে এলবি করে উইকেট আনেন নাজমুল অপু। ৩ চার ও এক ছক্কায় ২২ বলে ২৬ করে যান আফগান উদ্বোধনী।

পরের ওভারেই দ্বিতীয় সাফল্য আনেন আবু জায়েদ। আরেক ওপেনার উসমান ঘানিকে মুশফিকের গ্লাভসবন্দী করেন। একটি করে চার-ছয়ে ২৬ বলে ১৯ করে যান ঘানি।

তৃতীয় সাফল্য আসতে আবার একটু বিরতি। ১৩তম ওভারে আসগর স্ট্যানিকজাইকে সাব্বিরের ক্যাচ বানিয়ে উল্লাসে মাতেন আরিফুল হক। আফগান অধিনায়ক করে যান ৩ ছক্কায় ১৭ বলে ২৭ রান।

দুই বল পর মোহাম্মদ নবিকে (৩) সাজঘরে পাঠিয়ে নিজের দ্বিতীয় সাফল্য আনেন আবু জায়েদ।

নাজিবুল্লাহ জাদরানকে (১৫) সাজঘরে পাঠিয়ে এরপরই দারুণ এক অর্জনে নাম লেখান সাকিব আল হাসান। ৫০০ উইকেট আর ১০ হাজার রানের এলিট ক্লাবে ঢুকে যান তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে। সাউথ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস ও পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদির পর এই অর্জনের ক্লাবে তৃতীয় সদস্য হলেন টাইগারদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

সাত বোলার ব্যবহারের দিনে দারুণ করেছেন সাকিব। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচায় অধিনায়কের সংগ্রহ এক উইকেট। আবু জায়েদ সমান ওভারে ২৭ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। আরিফুল হক এক ওভারে ১৩ রানে পেয়েছেন এক উইকেট। আর ৪ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট গেছে নাজমুল অপুর ঝুলিতে।

তিন ম্যাচেই ওপেনিংয়ে বড় গড়বড়

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ উইকেট হারিয়েছে প্রথম বলেই। অন্যদিকে আফগানিস্তান তুলেছে প্রথম উইকেট জুটিতে তুলেছে ৬২ রান। বাংলাদেশ হারে ৪৫ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচেও বড় পার্থক্য গড়েছে ওপেনিং। বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারা ১ রানে। আর আফগানিস্তান শুরু জুটি থেকে পায় ৩৮ রান। বাংলাদেশ হারে ৬ উইকেটে। শেষ ম্যাচেও আধিপত্য দেখান আফগান ওপেনাররা। ৫৫ রান আসে আর বাংলাদেশের সেখানে ১৬।

সংক্ষিপ্তস্কোর- আফগানিস্তান-১৪৫/৬, বাংলাদেশ-১৪৪/৬

আফগানিস্তান : ১৪৫/৬ (২০ ওভার) শামিউল্লাহ ৩৩*, স্ট্যানিকজাই ২৭, শেহজাদ ২৬, গনি ১৯। অপু ২/১৮, আবু জায়েদ ২/২৭, আরিফুল ১/১৩, সাকিব ১/১৬।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ জুন ০৮,২০১৮)