রমজান প্রতিদিন
জাহান্নামের পরিচয়
এ.কে.এম মহিউদ্দীন, দ্য রিপোর্ট : আজ বৃহস্পতিবার ২৮ রমজান, আর মাত্র এক বা দুই দিন। তারপরেই বহুপ্রতীক্ষিত মুসলমানদের জাতীয় উৎসব ঈদুল ফিতর বা রোজা ভঙ্গের উৎসব। প্রতিটি প্রাণে তাই খুশির অনুরণন। আবাল বৃদ্ধ বণিতা-যার যার মত প্রস্তুত আনন্দধারায় সামিল হতে। সিয়াম পালন তার এই অবারিত আনন্দকে করেছে নির্মল। কেননা বান্দার একমাত্র চাওয়া জান্নাত। আর সে সব সময় চাই দোজখের কঠিন আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি পবিত্র রমজানে জান্নাত বা বেহেশতের দরোজা খোলা এবং জাহান্নাম বা দোজখের দরোজা বন্ধ রাখা হয়। কেননা রমজান বেহেশতের চাবি ও দোজখ থেকে মুক্তির উপায়। সুতরাং এই দুই স্থান সম্পর্কে আমাদের ধারণ থাকা উচিত। খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে এখানে জাহান্নাম সম্পর্কে দৃকপাত করা হচ্ছে।
চির দুঃখ কষ্ট পেরেশানি, লাঞ্ছনা গঞ্জনা, অপমান বিড়ম্বনা, দুভার্গ্য, লজ্জা শরম, ক্ষুধা পিপাসা, আগুন, অশান্তি, হতাশা নিরাশা, চিৎকার কান্নাকাটি, শাস্তি, অভিশাপ, আজাব-গজব ও অসন্তোষের স্থান হলো জাহান্নাম। শান্তির লেশমাত্রও সেখানে নেই। হাত-পা ও ঘাড় গলা শিকলে বেঁধে বেড়ি পরিয়ে দলে দলে জাহান্নামের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করা হবে। যেখানে শুধু অতি বেশি তেজ ও দাহ্য শক্তিসম্পন্ন আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। দোজখের অগ্নিশিখা তাদেরকে উপর,নীচ এবং ডান ও বাম থেকে স্পর্শ করবে, জ্বালাতে-পোড়াতে থাকবে। একবার চামড়া পুড়ে গেলে আবারো নতুন চামড়া গজাবে যেন বার বার আগুনের স্বাদ আস্বাদন করতে পার্ েপিপাসায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে। পানি চাইলে এত বেশি গরম পানি দেয়া হবে যা পান করার সাথে সাথে পেটের নাড়ি ভুঁড়ি গলে যাবে। এ হচ্ছে আজাবের উপর আজাব। তাতে পিপাসা না কমে আরো তীব্র হবে। অতি দুর্গন্ধময় জাক্কুম এবং কাঁটাযুক্ত ঘাস ও গিসলিন হবে তাদের খাদ্য। ক্ষুধার তাড়নায় জঠর জ্বালায় তা ভক্ষণ করতে গেলে পেটের ভেতরে আরো যন্ত্রণা বাড়াবে। খাদ্য ও পানীয় হবে আজাবের অন্যতম উপকরণ। অতিশয় ঠান্ডা ও হিম প্রবাহ দ্বারাও আরেক প্রকার শাস্তি দেয়া হবে। বরফের চাইতে শত গুন ঠান্ডা স্থানে তাদেরকে রাখা হবে। সে আজাব হবে করুণ। তারা শাস্তির মধ্যে মৃত্যু কামনা করবে, কিন্তু তা কবুল হবে না। নিরূপায় হয়ে জাহান্নাম থেকে বাইরে যেতে চাইবে। কিন্তু আজ তাদের কোন সাহায্যকারী নেই, নেই কোন সুপারিশকারী। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তি দাতা।
প্রিয় পাঠক, সেদিন দোজখিরা করুণ আর্তি জানাবে নানাভাবে। যেমন তারা বলবে, ‘জালেম সেদিন আপন হাত দুটো কামড়াতে কামড়াতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রাসূলের পথ অবলম্বন করতাম। হায়! আমি যদি অমুককে বন্ধু না বানাতাম। সে আমার কাছে উপদেশ আসার পরই আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছে। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোকা দেয়। [সূরা ফোরকান-২৬-২৯]
সূরা ইবরাহিমে বলা হয়েছে, ‘তুমি ওই দিন পাপীদেরকে পরস্পরে শৃঙ্খলাবদ্ধ দেখবে। তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং তাদের মুখমণ্ডলকে আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে।’ দোজখিদের শাস্তি হবে বহুমুখি। ইরশাদ হচ্ছে, যারা কাফের, তাদের জন্য আগুনের পোষাক তৈরি করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে। ফলে তাদের পেটে যা আছে, তা এবং চামড়া গলে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে। বলা হবে, দহন শাস্তি ভোগ কর। পবিত্র জাবুরে লিখিত আছে, জেনাকারী পুরুষ ও মহিলাকে জাহান্নামে তাদের লজ্জাস্থানের সাথে বেধে টানিয়ে রাখা হবে এবং এর উপর লোহা দিয়ে পেটানো হবে।
দোজখিদের মধ্যে চিহ্নিত কিছু শাস্তির মধ্যে থাকবে, যেমন যারা বে নামাজি; তাদেরকে দোজখের মালহাম নামক অঞ্চলের উটের ঘাড়ের মতো মোটা এবং প্রায় এক মাসের পথের সমান লম্বা বিষধর সাপ দংশন করতে থাকবে। প্রতি দংশনের বিষ ৭০ বছর পর্যন্ত যন্ত্রণা দেবে, এরপর গোশত খসে খসে পড়বে। যারা সোনা রূপার যাকাত দিবেনা, সেগুলিকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তাদের কপালে, পিঠ ও পাশে শেক দিয়ে বলা হবে, এখন তোমরা তোমাদের জমাকৃত সম্পদের মজা ভোগ কর। এছাড়াও সুদখোর, মিথ্যুক, নিন্দুক, চোর-ডাকাত, জালেম-অত্যাচারী, অন্যের অধিকার নষ্টকারী, মা-বাপের অবাধ্য ও তাদেরকে কষ্টদানকারী সন্তানের জন্যও বহু আজাব রয়েছে। এখানে শুধু দুএকটা দলের আজাবের সামান্য ইঙ্গিত দেয়া হলো।
জাহান্নামের গভীরতা অনেক। আবু হুরায়রা [রা.] বলেন, আমরা একদিন রাসূল [সা.] এর কাছে বসা ছিলাম। তিনি একটি শব্দ শুনলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি জানো এটা কিসের শব্দ? আমরা জবাবে বললাম, খোদা ও তার রাসূলই সর্বাধিক জ্ঞাত। তিনি বলেন, ৭০ বছর আগে, জাহান্নামে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছিল, এখন তা এর তলদেশে গিয়ে পড়েছে।[মুসলিম]
জাহান্নামিদের নিচে ও উপরে এবং ডানে ও বামে আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা এ আগুনে দগ্ধ হতে থাকবে। ইরশাদ হচ্ছে, তাদের জন্য উপর দিক এবং নিচের দিক থেকে আগুনের ছাতা থাকবে। দোজখিদের চামড়া পুড়ে যাবার পর নতুন করে আবার চামড়া গজাবে।
এই যে জাহান্নাম আর জাহান্নামিদের দুরবস্থার কথা আমরা জানছি, আরও জেনে রাখুন কত কঠিনইনা সেখানে শাস্তি রয়েছে। তারপরও সবচে ছোট শাস্তিটার কথা একটু স্মরণে রাখুন; আর সেটি এমন যে, রাসূল [সা.] বলেন, সবচাইতে কম সাজাপ্রাপ্ত জাহান্নামি ব্যক্তি হলো যার দুটো জুতার মধ্যে আগুনের দুটো ফিতা থাকবে। তা মাথার মগজকে এমনভাবে টগবগিয়ে সিদ্ধ করতে থাকবে যেন পাতিলে সিদ্ধ করা হয়। সে মনে করবে, তার চাইতে এত কঠিন আজাব আর কেউ ভোগ করছে না। অথচ, সেটা হলো সবচে কম আজাব। এভাবে নানা শাস্তির কথা কোরআন ও হাদিসের মধ্যে অসংখ্যস্থানে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের এ আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক পথ চলার চেষ্টা করতে হবে। আর সেই পথই সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ-যার কথা সুরায়ে ফাতিহার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সকলকে তার দ্বিনের পথে কবুল করুন, আমিন।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ১৪, ২০১৮)