বাজেটে ৩১ দেশি পণ্যের ট্যারিফ মূল্য বেড়েছে
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে দেশে উৎপাদিত হয় এমন ৩১ ধরনের পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
পণ্যগুলোর মধ্যে কেক, টমেটোর সস বা কেচআপ, তৈরি পোশাকের জুট, জুস, বিস্কুট, এলপি গ্যাস, আমসত্ত্ব, চশমার ফ্রেম, ডুপ্লেক্স বোর্ড। অন্যদিকে চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে একই ধরনের পণ্যের আমদানি বাড়তে পারে।
ট্যারিফ মূল্য হলো, উৎপাদন বা প্রস্তুত পর্যায়ে পণ্যের ন্যূনতম খরচের নির্ধারিত মূল্য। শুল্ক ও কর ফাঁকি ঠেকাতে এবং ভোক্তা পর্যায়ে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহের চিন্তা করে সরকার অনেক সময় বিভিন্ন পণ্যের ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। কেননা উৎপাদন মূল্য কমিয়ে দেখিয়ে উৎপাদকেরা শুল্ক ও কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নিতে পারেন। আবার মানহীন বা নিম্নমানের পণ্যের সরবরাহ ঠেকাতেও ট্যারিফ মূল্য বসানো হয়। ট্যারিফ মূল্যের ওপরেই সম্পূরক শুল্ক (যদি থাকে), মূল্য সংযোজন কর (মূসক), অগ্রিম ব্যবসায় ভ্যাট বা এটিভি, অগ্রিম করসহ যাবতীয় শুল্ক ও কর বসানো হয়। ট্যারিফ মূল্য হচ্ছে শুল্ক ও কর বসানোর ভিত্তিমূল্য। ট্যারিফ মূল্য কমানো বা বাড়ানো হলে পণ্যের দাম কমতে বা বাড়তে পারে। সাধারণত ট্যারিফ মূল্য বাড়লে স্থানীয় উৎপাদকেরা সমস্যায় পড়েন।
দেশের কোনো উদ্যোক্তা আম, আনারস, পেয়ারা ও তেঁতুলের জুস উৎপাদন করলে তাঁর খরচ বাড়বে। কারণ এসব পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে ট্যারিফ মূল্যে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। আগে এক লিটার জুস দেশে উৎপাদন করলে ট্যারিফ মূল্য ধরা হতো ২০ টাকা। এখন থেকে ধরা হবে ২৫ টাকা। এই ২৫ টাকা ধরেই সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম করসহ প্রযোজ্য হারে শুল্ক ও কর বসবে। সে ক্ষেত্রে ভোক্তাদের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ করে এসব পণ্য কিনতে হবে।
একইভাবে টমেটো পেস্ট ও আমসত্ত্বের ট্যারিফ মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে টমেটো পেস্টের প্রতি কেজিতে ট্যারিফ মূল্য ছিল ২০ টাকা, এখন করা হয়েছে ৪০ টাকা। আর আমসত্ত্বের ১৬ গ্রাম প্যাকের ট্যারিফ মূল্য ছিল ২ টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা। উৎপাদক মুনাফার হার না কমালে এসব পণ্যের দাম দ্বিগুণ হতে পারে। দেশে প্রাণ গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জুস, আমসত্ত্বসহ এসব পণ্য তৈরি করে থাকে।
অন্যদিকে দেশি টমেটো কেচআপ বা সস এবং আম, আনারস, পেয়ারা, কলার পাল্পের পাশাপাশি তেঁতুলের পেস্টের দামও বাড়তে পারে। বোতলজাত টমেটো সসের ট্যারিফ মূল্য বেড়েছে ১০ টাকা। এখন থেকে প্রতি কেজির দাম কমপক্ষে ৬৫ টাকা ধরতে হবে। এতে উৎপাদকদের কারখানা থেকে বের হওয়ার পর বাজারে আসার আগেই সসের দাম বেড়ে যেতে পারে।
দেশে এলপি গ্যাসের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ অবস্থায় ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছ, যা আগে ছিল না। এখন থেকে ৪৫ কেজির ঊর্ধ্বে এলপি গ্যাস সরবরাহ করা হলে প্রতি কেজিতে ট্যারিফ মূল্য হবে ৩ টাকা।
যাঁদের চোখের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য সুখবর নেই। দেশে তৈরি চশমার ফ্রেম ও গ্লাসের ওপর ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হয়েছে। চশমার প্রতি পিস প্লাস্টিক বা ধাতব ফ্রেমে ১০ টাকা করে ট্যারিফ মূল্য বেড়েছে। এর ফলে চশমা ও সানগ্লাসের দাম ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে। প্রতি পিস চশমার প্লাস্টিক ফ্রেম এখন ৪০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, মেটাল ফ্রেম (স্প্রিংযুক্ত হোক বা না হোক) ৫০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা, প্লাস্টিকের সানগ্লাস ৪০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, ধাতব সানগ্লাসের ফ্রেম ৫০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর রিডিং গ্লাসের প্রতি পিসে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ টাকা করা হয়েছে। এখন দেশে চশমার ফ্রেম ও গ্লাস তৈরি হচ্ছে। এগুলোর দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে চশমার ফ্রেম ও গ্লাস আমদানি বাড়তে পারে।
তৈরি পোশাক খাতের ঝুটের বিশাল ব্যবসা আছে। সেখানেও ট্যারিফ মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা ধরে ভ্যাট দিতে হতো। এখন থেকে কটন ইয়ার্ন বর্জ্য ও ডেনিম বর্জ্যে ২০ টাকা কেজি দরে ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
হাতে তৈরি বিস্কুট ও কেকের ট্যারিফ মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে পাড়া-মহল্লার ছোট উৎপাদকদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে হাতে তৈরি এক কেজি বিস্কুটের দাম যদি ১৫০ টাকার কম হয়, তাতে ভ্যাট দিতে হবে না। আগে এই সীমা ছিল ১০০ টাকা পর্যন্ত। দাম ১৫০ টাকা পেরোলেই প্রতি কেজির দাম ৬০ টাকা ধরে শুল্ক ও কর বসানো হবে। আর হাতে তৈরি কেকের প্রতি কেজির দাম ১৫০ টাকা পেরোলেই ৬০ টাকা দরে শুল্ক ও কর বসবে।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/জুন ১৪, ২০১৮)