দ্য রিপোর্ট২৪ ডেস্ক : ১৯১৩ সালের ৭ নভেম্বর আলবেয়ার ক্যামু জন্মেছিলেন আলজেরিয়ায়। তার একশতম জন্মদিনকে নানাভাবে উদযাপন করছে বোদ্ধা ও ভক্তরা। এই উপলক্ষ্যে বিখ্যাত প্রকাশন সংস্থা পেঙ্গুইন নতুন প্রচ্ছদ ও ভূমিকাসহ তার বইগুলো নতুন করে ছেপেছে। এখনই আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করতে পারেন- কেন একশ বছর বয়সী আলবেয়ার ক্যামু এ কালের পাঠকের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রভাবক হবার যোগ্য?


সেটা তার লেখার বিষয় ও আগ্রহ থেকে স্পষ্ট হওয়া যাবে খানিকটা। ক্যামুর আগ্রহ বৈচিত্র্য ধরণের। নাটক লেখা থেকে শুরু করে ইন্ডি রক কোথায় নেই ক্যামু। তাকে বলা হয় মাস্টার অভ এবসার্ড। তিনি স্কুল বেলা থেকেই দারুণ ফুটবল খেলতেন। খেলায় তিনি গোল ধরার কাজই করতেন। সেটা নাকি তার জীবনে দারুণভাবে কাজে লেগেছিল। তিনি ফুটবল খেলার কাছে নৈতিকতা ও বাধ্যতা শেখার জন্য ঋণ স্বীকার করেছেন এক লেখায়।


কিন্তু কি পরিহাস! বদাভ্যাসের জন্য ফুটবল খেলা বেশি দিন চালিয়ে যেতে পারেননি। খুব খারাপ ধরনের যক্ষা রোগের পরেও তিনি ধুমপান ছাড়েননি। যা তার ফুটবল ক্যারিয়ারের জন্য যম হয়ে দাঁড়ায়। শুনলে মজাই পাবেন তিনি পোষা বিড়ালকে সিগারেট নামে ডাকতেন।


মাত্র ছেচল্লিশ বছর বয়সে ১৯৬০ সালের ৪ জানুয়ারি কার এক্সিডেন্টে তিনি মারা যান। এটা নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার মাত্র তিন বছর পরের ঘটনা।


ক্যামু পাঁচটি ফিকশন বা উপন্যাস লিখেছিলেন। এগুলো হলো : দি ফল, দি আউটসাইডার, দি প্লেগ, এ হ্যাপি ডেথ এবং দি ফার্স্ট ম্যান। সম্ভবত ১৯৪২ সালে প্রকাশিত দি আউটসাইডারের জন্যই লোকে তাকে বেশি চেনে। এটি খুবই জনপ্রিয় উপন্যাস। ম্যুসাল্ট নামের একজন খুনীর গল্প দি আউটসাইডার। সমাজের সঙ্গে তার কোন সুসংহত সম্পর্ক ছিল না। এ সমাজে সে যেন অন্য কেউ। সমাজ তাকে কোনভাবেই আন্দোলিত করে না। এমনকি মায়ের মৃত্যুতে তার কান্না আসে না। এক ধরণের মানসিক বিকারগ্রস্থতার আবরণে ক্যামু একটি সময় ও তার প্রতিক্রিয়া মানুষের চরিত্রের উপর আরোপ করেন। এই বইয়ের প্রথম লাইনটা বেশ বিখ্যাত। যেখানে মা মারা যাবার কথাটি অনির্ধারিত সময় দিয়ে উল্লেখ করে নায়ক।


ক্যামুর লেখা প্রবন্ধগুলোতে থেকে তার চিন্তা ও চিন্তার প্রক্রিয়া নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা মেলে। তার বিখ্যাত প্রবন্ধ দি মিথ অব সিসিফাস প্রায় দি আউটসাইডারের দৈর্ঘ্যের সমান (১৩০ পৃষ্ঠা)। এটি এবসার্ডের প্রতি তার আকর্ষণের ভালো উদাহরণ। মানুষ যে জগতে বাস করে তার অর্থ খোঁজার মধ্যে এক ধরনের নিরর্থক ব্যাপার আছে। সেই জগতের প্রকৃত রূপ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ফলে কখনো প্রকৃত সত্য জানতে পারে না। মানুষ কিভাবে জীবনের প্রতিকূল বাস্তবতার মোকাবেলা করে তা-ই তার আলোচনার বিষয়।


ক্যামুর এবসার্ড থিওরি এতই তারিফ লাভ করে যে এক পর্যায়ে তিনি কথাবার্তায় ‘দ্যাটস এবসার্ড’ শব্দটির ব্যবহার বন্ধ করে দেন। তার এই ধারনাকে পাঠকরা সুক্ষদর্শী দার্শনিক বিষয় হিসেবেই নেয়। পরবর্তীতে এই ধারনা অনেকে প্রভাবিত হয়েছেন।


আলবেয়ার ক্যামু তার ফিকশন ও প্রবন্ধের জন্য বেশি জনপ্রিয়। এছাড়া তিনি ছয়টি নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলো কালিগুলা। এবসার্ডের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে একে দি আউটসাইডার ও দি মিথ অব সিসিফাসের পাশে রাখা হয়।


তিনি একদা আলজার রিপাবলিক্যান নিউজপেপারে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছিলেন। সাংবাদিকতায় তিনি মুগ্ধ ছিলেন। তিনি একে শ্রেষ্ঠ পেশার মধ্যে একটি মনে করতেন। নাজি দখলকৃত ফ্রান্স স্বাধীন হবার পর তিনি কমব্যাট নামের একটি পত্রিকায় কলাম লিখতেন। আকচুয়ালেস নামে তার রাজনৈতিক সাংবাদিকতা, প্রবন্ধ ও সাক্ষাৎকারের একটি সংগ্রহ বাজারে আছে। এতে অন্তর্ভুক্ত আছে মার্কসবাদ ও অস্তিত্ববাদ নিয়ে তার বৈপ্লবিক চিন্তা। তাকে সচরাচর অস্তিত্ববাদী দার্শনিকদের কাতারে ফেলা হলেও তিনি এই বিষয়ে মজার একটি কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি অস্তিত্ববাদী নয়। এর সঙ্গে আমাদের নাম যুক্ত আছে দেখে সার্ত্রে আর আমি সবসময় অবাকই হই। সার্ত্রের কথার সঙ্গে মিলে যায় বিনয় মজুমদারের একটা ঘটনা। বিনয় মজুমদারের ভাষ্যে তিনি কলকাতার হাংরি জেনারেশন আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন না। অথচ পত্রিকায় বলা হচ্ছিল তিনিই নাকি এই আন্দোলনের নেতা।


ক্যামুর সর্বশেষ বইয়ের নাম দি ফার্স্ট মেন। এটি পাওয়া যায় তাকে নিয়ে এক্সিডেন্টকরা গাড়ির ধ্বংসাবশেষের ভেতর। এটাও একটি ফিকশন। তবে এতে তার আত্মজৈবনিক উপাদান ছিল। এতে আলজেরিয়ায় দরিদ্র অবস্থার শৈশব ও অক্ষরজ্ঞানহীন তার মায়ের দেখা মেলে।


তার প্রভাব নিয়ে সামান্য উদাহরণ দেয়া যাক। বিশ শতকের অন্যতম সেরা নাট্যকার স্যামুয়েল বেকেট ও আর্থার মিলার তার নাটক ও অন্যান্য লেখা থেকে অনুপ্রাণিত ছিলেন। ব্রিটিশ মিউজিক্যাল নাটকে দি আউটসাউডার রেখে গেছে স্থায়ী প্রভাব। স্কটিশ ইন্ডি রক ব্যান্ড ম্যুসাল্টের নাম এসেছে তার বিখ্যাত চরিত্র থেকে। এই ব্যান্ডের গায়ক নিল পেনিকক বলেন, এই দুনিয়ায় যত রাগী তরুণ আছে তাদের সবসময়ই ক্যামু এবং ল’ইস্টানজার (দি আউটসাইডার) কাজে লাগবে।


(দ্য রিপোর্ট২৪/ডব্লিউএস/এমডি/নভেম্বর ০৮, ২০১৩)