নেবার কথা ৩৭ হাজার, নিচ্ছে ৪ লাখ!
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: বাংলাদেশি আদম ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে মানব পাচারকারী একটি সংঘবদ্ধ চক্র মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে গত দুই বছরে শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই বিলিয়ন রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে বলে দেশটির একটি গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়েছে।
দ্য ডেইলি স্টারের পরিবেশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি পাচারকারী এই চক্রটির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও গতকাল মালয়েশিয়ার দ্য স্টার এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে জানানো হয়, কাজের সন্ধানে মালয়েশিয়াগামী প্রত্যেকের কাছে চার লাখ করে টাকা নেয় বাংলাদেশের স্থানীয় এজেন্টরা। পরে আরেক দফাদালালের হাত ঘুরেজনশক্তি রপ্তানিকারকদের সিন্ডিকেটকে এর অর্ধেক টাকা দিয়ে ওয়ার্ক পারমিট ও বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়। অথচ শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য উল্টো মালয়েশিয়ার নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোরই প্রত্যেক শ্রমিক বাবদ ৩০৫ রিঙ্গিত পরিশোধ করার কথা।
এভাবে ২০১৬ সাল থেকে দুই বছরে এক লাখের বেশি বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় গেছেন বলে জানতে পেরেছে সংবাদপত্রটি। এখনও এক লাখের বেশি বাংলাদেশি এভাবে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছেন।
দ্য স্টারের খবরে আরও বলা হয়, অনিয়মের অভিযোগে মালয়েশিয়া সরকার জি টু জি প্লাস (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিতে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ রেখেছে। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের দাবি, তিনি এরকম কিছু জানেন না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে মানবপাচারকারী চক্রটির নেতৃত্বে রয়েছেন যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী তার ‘দাতুক সেরি’ খেতাব রয়েছে। মালয়েশিয়ায় বড় অবদান রয়েছে শুধুমাত্র এমন ব্যক্তিকেই এই উপাধি দেয় দেশটির সরকার।
তার নাম প্রকাশ না করে খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া দুই দেশেই সরকারের ওপর তার প্রভাব রয়েছে। মূলত তার প্রভাবেই জি টু জি প্লাস চুক্তি করে দুই দেশ।
২০১৬ সালের জি টু জি প্লাস চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের প্রায় এক হাজার জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান শ্রমিক সংগ্রহ করার কাজ পায়। তবে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন-বায়রা’র মহাসচিব রুহুল আমিন। গত রাতে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জি টু জি চুক্তি অনুযায়ী মালয়েশিয়াগামী প্রত্যেক শ্রমিকের কাছে মাত্র ৩৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে তাদের প্রত্যেকের অভিবাসন ছাড়পত্র ও মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন রয়েছে। তার প্রশ্ন, ‘তাহলে এটাকে কিভাবে মানব পাচার বলা যায়?’
দ্য স্টারের প্রতিবেদনটি সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৬৪ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গেছেন। অথচ সংবাদপত্রের ওই প্রতিবেদনে এক লাখ শ্রমিক যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।’
একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে মালয়েশিয়ার ওই সংবাদপত্রের খবরে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে যে ১০টি কোম্পানি শ্রমিক সরবরাহের কাজ পেয়েছে তার বেশ কয়েকটি নাম সর্বস্ব। মালয়েশিয়ায় নিয়োগদাতা ও শ্রমিকদের মধ্যে দালাল হিসেবে কাজ করে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪০০,০০০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। অথচ বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার উড়োজাহাজ ভাড়াসহ পুরো প্রক্রিয়ায় খরচ হয় সর্বোচ্চ ৪০,০০০ টাকা।
সূত্রটি আরও জানায়, অসহায় শ্রমিকদের কাছ থেকে এভাবে টাকা হাতিয়ে ওই ‘দাতুক সেরি’ টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছেন। ব্যবসা নির্বিঘ্ন রাখতে টাকার একটি অংশ রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের দিচ্ছেন। এই কাজে তার সহযোগীরাও বিলাসী জীবন যাপন করছেন। ৪০ এর কোঠায় থাকা এই ব্যক্তি ১৫ বছর আগে এক মালয়েশিয়ান নারীকে বিয়ে করেন।
মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের শোষণ নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ২০০৯ সালে বিদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল দেশটির সরকার। সে বছর কয়েক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিল।
বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের দ্বার খুলতে ২০১২ সালে সরকারি পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হলেও রিক্রুটিং এজেন্ট ও দালালদের চক্রান্তের কারণে সেই দফায় মাত্র ১০ হাজার শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এর পর ২০১৬ সালে এসে মালয়েশিয়ার সঙ্গে জি টু জি প্লাস চুক্তি করে সরকার। এই চুক্তির পর বলা হয়, মালয়েশিয়ায় যেতেসর্বোচ্চ ৩৭ হাজার টাকা খরচ হবেশ্রমিকদের।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ২৩,২০১৮)