ব্যাংকে সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত তদারক করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ঋণ ও আমানতের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত যেন ঘোষণাতেই সার না হয়- সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো জুলাই মাসে যে ক্ষেত্রে যে সুদহার নির্ধারণ করবে, তা যথাযথভাবে কার্যকর করছে কি-না, তা তদারক করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সুদহার কমানোর ফলে স্বাভাবিক ঋণ অনুমোদন বা ছাড় প্রক্রিয়া যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ অবস্থান জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যাংকিং সংস্কার বিষয়ক উপদেষ্টা এসকে সুর চৌধুরী ও সব ডেপুটি গভর্নর, বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক বিষয়ে জানতে চাইলে এসকে সুর চৌধুরী বলেন, বিএবির পক্ষ থেকে ঘোষিত সুদহার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো যেন সুদহার কার্যকর করে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর ঘোষণা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো সুদহার কার্যকর করছে কি-না, তা তদারকে ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন শাখায় পরিদর্শক টিম পাঠানো হবে।
আগের দিন বুধবার ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামানোর ঘোষণা দেয় বিএবি। বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের নিয়ে বিএবি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংগঠনের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার জানান, আগামী ১ জুলাই থেকে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করবে। আর তিন মাস মেয়াদি আমানত নেবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যাংকগুলো সুদহার কার্যকর করছে কি-না, তা তদারকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হবে। এর পর শুক্রবার বিএবি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে। জানা গেছে, বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, দীর্ঘ মেয়াদে সুদহার কমানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে খেলাপি ঋণ আদায়ের ওপর। নতুন করে কোনো ঋণ যেন খেলাপি না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি এমডিদের অনেক বড় মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবার সুদহার কমানোর ফলে স্বাভাবিক ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ প্রক্রিয়া যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী ২৫ জুন ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সঙ্গে বৈঠক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ২ জুলাই সব ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক রয়েছে। এ দুটি বৈঠকে সুদহার বিষয়ে ব্যাংকগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া সাম্প্রতিক বিভিন্ন সুবিধার উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-সিআরআর সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করা, সরকারি আমানতের অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সুযোগ, করপোরেট কর ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশ নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধারের জন্য রেপোর সুদহার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশে নামানো, রেপোর মেয়াদ ৭ দিনের পরিবর্তে ২৮ দিন নির্ধারণ। এসব সুবিধার পরও সুদহার না কমানোর বিষয়টিকে দুঃখজনক মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ২৩,২০১৮)