এক অঙ্কে ঋণের সুদ: নয়া ‘কৌশল’ ব্যাংক মালিকদের
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি’র প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে তারা এই নিশ্চয়তা চেয়েছেন।
এবিবির এই প্রস্তাবটি সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে আলোচনা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন গভর্নর ফজলে কবির।
এ বিষয়ে এবিবির চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পর্ষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে ব্যাংকগুলো প্রস্তুত। বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন বিনিয়োগের সুদহার ৯ শতাংশ হবে। তবে জাতীয় পর্যায়ের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে আমাদের তারল্য যোগান দিতে হবে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারি আমানত ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটি এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এই আমানত ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এর বেশি সুদ যাতে সরকারি ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান তহবিল যোগানে না চায় সেটি সরকারিভাবে জানিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে তারল্য রয়েছে। এসব তারল্যের অংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আসতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এক অঙ্কে ঋণের সুদ নামিয়ে আনার ঘোষণা বাস্তবায়নে সব ধরনের নীতি সহায়তা দেবে। তাই এবিবির দাবি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে বেশকিছু দিক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে এবিবির প্রতিনিধিদের। সেখানে একই সঙ্গে তাদের জানিয়ে দেয়া হয়, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছুটা ছাড় দেয়া হলেও খুব বেশি আইনি ব্যতয় বরদাস্ত করা হবে না। তবে নিজেদের সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলো বাস্তবায়ন করছে কি-না সেটি নজরদারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়োজনে তাদের কাছে বিতরণ করা ঋণের হালাগাদ তথ্য চাওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্ম উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ১ জুলাই থেকে সার্বিকভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে মর্মে আশ্বস্ত করেছে এবিবি। তবে ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা পরিপালন করতে হবে। ব্যাংককে কোনোভাবে ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না। স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে।
এ ছাড়া ঋণের মান নিশ্চিত করতে হবে। ঋণ আমানত হার যাতে লঙ্ঘন না হয় ও আগ্রাসী ব্যাংকিং করে ব্যাংকে যাতে নতুন সঙ্কট তৈরি করা না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান এস কে সুর।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান, এস এম মনিরুজ্জামান, এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান, বর্তমান কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম, সদস্য এনআরবি ব্যাংকের এমডি মো. মেহমুদ হুসাইন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৩ এপ্রিল গণভবনে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের ডেকে নিয়ে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক ঋণের সুদ হার এক অংকে (সিঙ্গেল ডিজিটে) আনতেই হবে। এর প্রায় মাসখানেক আগেও দলীয় এক সভায় একই নির্দেশ দেন তিনি। সেসময়সুদ হার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিআরআর কমানোসহ সরকার থেকে বেশ কয়েকটি অনৈতিক সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন ব্যাংক মালিকেরা।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ২৫,২০১৮)