বিমান বিধ্বস্তে নিহত ২ পাইলটের দেহাবশেষ উদ্ধার
যশোর প্রতিনিধি : যশোরে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত দুই পাইলটের দেহের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিমানটির ৩৫ শতাংশের মতো উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
সোমবার (২ জুলাই) সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরুর পর দুপুরে ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানিয়েছেন যশোর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপ-পরিচালক পরিমল কুন্ডু।
রবিবার (১ জুলাই) রাত ৯টা ২০ মিনিটে যশোরের মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি থেকে একটি প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন করে। এর কিছুক্ষণ পর সেটি যশোর সদর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের বুকভরা বাওড়ের মধ্যে আছড়ে পড়ে।
পরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর আইএসপিআর থেকে জানানো হয়, রোববার রাতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কে-৮ ডব্লিউ নামের একটি বিমান যশোর সদর উপজেলার বুকভরা বাওড়ের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানের স্কোয়াড্রন লিডার মো. সিরাজুল ইসলাম এবং স্কোয়াড্রন লিডার এনায়েত কবির পলাশ নিহত হন।
এদের মধ্যে পলাশ জামালপুরের সরিষাবাড়িয়া উপজেলার কৃষ্ণপুর শফিউদ্দিনের ছেলে। তার তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। আর সিরাজুল ইসলামের বাড়ি রাজবাড়ী। তবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
পরিমল কুন্ডু জানান, রবিবার রাত ও সোমবার সকাল থেকে উদ্ধার অভিযানে এখন পর্যন্ত বিধ্বস্ত বিমানটির ৩৫ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে বিমানের ইঞ্জিন এখনো উদ্ধার করা যায়নি।
তিনি বলেন, ‘নিহত দুই পাইলটের মাথা, হাতসহ শরীরের ছিন্নভিন্ন বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। সামগ্রিক এ উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াডন লিডার মাহাদি।’
এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমান দুর্ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবুল বাশার মিয়া জানান, রাত সাড়ে নয়টার দিকে যশোর সদর উপজেলার বুকভরা বাওড়ের মধ্যে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান পড়ে যাওয়ার খবর পান তারা। এ খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়।
বিমান বাহিনী সূত্র জানায়, যশোরের মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি থেকে প্রশিক্ষণ বিমানটি নিয়ে উড়ে যান স্কোয়াডন লিডার এনায়েত ও স্কোয়াডন লিডার সিরাজ। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই তারা টাওয়ার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এরপরই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
খবর পেয়ে বিমান বাহিনীর সদস্যরাসহ ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তবে রাত ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ডুবে যাওয়া বিমানের অবস্থান চিহ্নিত করতে বিলম্ব হয়।
উদ্ধার অভিযানের শুরুতেই পানিতে ভাসতে থাকা বিধ্বস্ত বিমানের কিছু ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। পরে খুলনা থেকে এসে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় নৌ-বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। রাত প্রায় চারটা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এরপর অভিযান স্থগিত করা হয়। সোমবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে নৌ-বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ফের এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
এর আগে রবিবার রাতে বিকট শব্দে বিমান বুকভরা বাওড়ের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীও সেখানে ভিড় করেন। সোমবার সকালে রীতিমতো লোক সমাগম হয়। তাদের সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে অবস্থান নেন।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/জুলাই ০২, ২০১৮)