চার জেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে বন্যা দেখা দিয়েছে।
এর ফলে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজারে কয়েকশ’ গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও মাছের খামার।
কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ক্ষেতের ফসল ও গো-খাদ্য হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদী ভাঙনে ১৩টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যাজনিত সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব রকম ছুটি (হজ পালনের ছুটি ব্যতীত) বাতিল করেছে।
এছাড়া মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট দফতরপ্রধানদের স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বন্যা মোকাবেলায় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার: দোয়ারাবাজারে টানা বর্ষণ ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
উঠতি আউশ-ইরি ফসল, রোপা আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। গো-খাদ্য সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ বলেন, উপজেলা সদরের মাঝেরগাঁওয়ের পাশে সুরমা নদীর ভাঙন সংলগ্ন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পানি ওঠায় দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ছাতক উপজেলা সদরের সঙ্গেও অন্যান্য স্থানের সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। উপজেলার ১৩টি ইউপি ও একটি পৌরসভার অধিকাংশ বাসাবাড়ি রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
বিশেষ করে উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা, ইসলামপুর, নোয়ারাই, চরমহল্লা, জাউয়াবাজার, দোলারবাজার, ছৈলা আফজলাবাদ ও ছাতক সদর ইউনিয়নের প্রায় ৫ শতাধিক গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এছাড়া বন্যার পানিতে কয়েকশ’ মাছের খামার ভেসে গেছে।
রোপা আউশ ও বোনা আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, সুরমা নদীর পানি বৃহস্পতিবার বিকেলে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিনি বলেন, হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জে সুরমাসহ অন্যান্য নদীতে পানি যে উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে তা এখানকার মানুষের জন্য স্বাভাবিক মাত্রায় রয়েছে। সুনামগঞ্জে এখনও বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়নি।
ডিমলা (নীলফামারী): তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের ঢল সামাল দিতে খুলে রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। ফলে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা ও উপজেলার প্রায় ২০টি চর গ্রাম হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে।
এতে প্রায় ৫ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এদিকে তিস্তার প্রবল স্রোতে ভাঙনের কবলে পড়ে ১৩টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছেন। তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ডিমলা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্র্ণ এলাকার ২০টি চর ও গ্রামের পরিবারগুলো বন্যাকবলিত।
ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ছাতুনামার চর, ফরেস্টের চর, সোনাখুলীর চর ও ভেন্ডাবাড়ি চরে দেড় হাজার পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে ৭টি পরিবারের বসতঘর হুমকির মুখে পড়ায় তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
খালিশা চাঁপানী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার বলেন, পূর্ব বাইশপুকুর ও ছোটখাতা মৌজার ৫ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি বয়ে যাচ্ছে। নদী সংলগ্ন বসবাসরত পরিবারগুলোকে সতর্ক অবস্থায় থাকার জন্য বলা হয়েছে।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম): ধরলা, বারোমাসিয়া, নীল কমলসহ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার রাঙ্গামাটি, খোচাবাড়ী, বড়ভিটা, বড়লই, চর বড়লই, ধনীরাম, কবির মামুদ, প্রাণকৃষ্ণ, চন্দ্রখানা, সোনইকাজী, রাম প্রসাদ, যতীন্দ্র নারায়ণ, ঝাউকুটি, শিমুলবাড়ী, চড় গোরক মণ্ডল, গোরক মণ্ডলসহ ধরলার তীরবর্তী এলাকায় হু হু করে পানি প্রবেশ করছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব এলাকার শত শত বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে ধরলা সেতুর পূর্বপাড়ের বেড়িবাঁধটিও। ফলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ধরলার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
ইসলামপুর (জামালপুর): উজানের ঢলে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি ২৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে যমুনা তীরবর্তী ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী, নোয়ারপাড়া, চিনাডুলী, বেলগাছা ও কুলকান্দি ইউনিয়নের নিুাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানির প্রচণ্ড স্রোতে ডেবরাইপ্যাঁচ এলাকায় ব্রিজ ও রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় চিনাডুলী ইউনিয়নের দক্ষিণ চিনাডুলী গ্রামের সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীসহ পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বান্দরবান : বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। প্লাবিত অনেক অঞ্চল থেকে নেমে গেছে বন্যার পানি। স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটিসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সব রুটে সব ধরনের যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুলাই ০৬, ২০১৮)