তিন জাতীয় অধ্যাপককে ইউজিসি’র সংবর্ধনা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: তিন জাতীয় অধ্যাপককে সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। সোমবার বিকাল তিনটার দিকে ইউজিসি মিলনায়তনে তাদেরকে সংবর্ধনা দেয়া হয় । একে একে মঞ্চে আসেন সম্প্রতি জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া দেশের বরেণ্য তিন শিক্ষাবিদ।
এরা হলেন; সংগ্রাম-সংকটে দেশকে দিক-নির্দেশনা দেয়া ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, পদ্মাসেতু নির্মাণে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ভরসা দেয়া প্রকৌশল বিদ্যার অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম।
তাদেরকে সংবর্ধনা জানাতে ইউজিসি’র অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট, উত্তরীয়তে বরণ করে নেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ এবং ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।
এরপর শিক্ষাঙ্গনে নিজেদের সুদীর্ঘ পথচলার স্মরণীয় মুহূর্তগুলো তুলে ধরতে শুরু করেন এই তিন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ।
শুরুতেই বক্তব্য দিতে গিয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন: এবছর জুলাই মাসে আমার শিক্ষকতা জীবনের ষাট বছর পূর্ণ হলো। এই মুহুর্তে এই বিরল সম্মাননা আমার ভাগ্যে এসে জুটলো। এদিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। এই মঞ্চে বসে বসে আমি আমার স্কুল জীবন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের কথা মনে করছিলাম।
‘স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, একজন শিক্ষকের হাতে ধরে গিয়েছিলাম খেলাঘরে, সেখান থেকে আমার রেডিও-টেলিভিশনের সঙ্গে সম্পর্কের সূচনা। পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কথা। আমার পরম সৌভাগ্য যে আমি সরাসরি তার ছাত্র ছিলাম। মনে পড়ছে মুনীর চৌধুরী, ড. আহমদ শরীফের মতো শিক্ষকদের কথা। মনে পড়ছে আমাদের ছাত্র হুমায়ুন আজাদের কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে বর্তমান শিক্ষা সচিবসহ আমার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ছড়িয়ে আছে দেশের নানা পর্যায়ে। তাদের সবার ভালোবাসা আমাকে এতোদূর নিয়ে এসেছে।’ড. আনিসুজ্জামান বলেন: আমি মেট্রিক পাস করার আগে ঠিক করেছিলাম বাংলা সাহিত্যে পড়বো এবং শিক্ষকতা করবো। তখন কল্পনা করতে পারিনি যে আমার শিক্ষকতা জীবন কোথায় গিয়ে পূর্ণতা লাভ করবে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদ থেকে যখন অবসর নিচ্ছি তখনও ভাবিনি ইমেরিটাস অধ্যাপক হবো, জাতীয় অধ্যাপক হবো ভাবাটা তো দূরের কথা। কাজেই যে সম্মান আমি পেলাম তা মাথা পেতে নিলাম। শিক্ষাক্ষেত্র এবং দেশকে আমি যা দিতে পেরেছি শিক্ষাক্ষেত্র এবং দেশ তার বহুগুণ আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
ভাষা-সাহিত্যে দু’জন জাতীয় অধ্যাপকের পদচারণা থাকলেও অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর পদচারণা প্রযুক্তি-প্রকৌশল আঙ্গিনায়।
শিক্ষকতা জীবনের শুরুটা তুলে ধরে তিনি বলেন: আমার শিক্ষকতা জীবন শুরু আজ থেকে ৫৫ বছর আগে। ১৯৬৩ সালের অক্টোবরে। আমার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের রেজাল্ট বের হয় ১৯৬৩ সালের সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখে। আমি ২৮ ডিসেম্বর প্রকৌশল বিভাগের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলাম, তিনি রেজাল্ট ভালো করায় অভিনন্দন জানালেন। এর এক মিনিট পরেই বললেন আমার সঙ্গে তার কথা বলার সময় নাই! কারণ তৃতীয় বর্ষের ক্লাস নেয়া একজন শিক্ষক সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন। এরপরই তিনি একজন কর্মচারীকে ডেকে বললেন আমার হাতে চক-ডাস্টার ধরিয়ে দিতে। কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই আমাকে কেবল রুম নাম্বার বলে দিয়ে ক্লাস নিতে পাঠিয়ে দিলেন।
‘ছাত্রজীবন থেকে শিক্ষক জীবন কোন ‘গ্যাপ’ ছাড়াই শুরু হয়ে গেলো। আজ বাংলা সাহিত্য শিক্ষার দুই দিকপালের সঙ্গে আমি একটু বেমানান। আমার জায়গাটা প্রয়োগিক। আমি দীর্ঘ ৫ দশকের ওপর সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পে কাজ করছি। আমার বিদেশে নামী বহুতল ভবন তৈরির সময় ডাকা হয়েছে, যাওয়ার সুযোগ এসেছে। কিন্তু আমি দেশ ছেড়ে যাইনি। তাতে দেশ আমাকে যা দিয়েছে, আমার মনে হয় বিদেশে কাজ করলে এই তৃপ্তিটুকু আমি পেতাম না।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ তিন জাতীয় অধ্যাপককে জ্ঞানের বাতিঘর উল্লেখ করে বলেন: তাদের জ্ঞান ও দক্ষতায় দেশ-জাতি আলোকিত হয়েছে। তাদের সম্মান দিতে পেরে আমরাও তাদের আলোয় আলোকিত হয়েছি, গর্বিত হয়েছি। তাদের সম্মানিত করতে পেরে আমরা নিজেরা সম্মানিত হয়েছি।
শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগের বিষয়ে কোন বিতর্কের সুযোগ রাখা হয়নি জানিয়ে বলেন: এবার কমিটি এই তিন বরেণ্য শিক্ষাবিদের নাম জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে সুপারিশ করলে তা একবাক্যে অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার প্রত্যেকেরই একই বক্তব্য যে, যাদের জাতীয় অধ্যাপকের পদে যাওয়ার কথা ছিলো সরকার তাদেরই সেই জায়গা দিয়েছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৯ জুন সরকার বরেণ্য এই তিন শিক্ষাবিদকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুলাই ০৯,২০১৮)