গ্রুপ পর্বে ইরানের বিপক্ষে মিস করা রোনালদোর পেনাল্টিটি দিয়েই ইতিহাসের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিল রাশিয়া বিশ্বকাপ। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি পেনাল্টির রেকর্ড যে হয়ে গিয়েছিল ওই পেনাল্টিটি দিয়েই।
টুর্নামেন্ট যত এগিয়েছে, এই রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। এই বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত ২৮ টি পেনাল্টির ঘটনা ঘটেছে, আগের রেকর্ডের চেয়ে যা এরই মধ্যে ১০ টি বেশি। এর আগে ১৯৯০, ১৯৯৮ ও ২০০২ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৮ টি করে পেনাল্টির ঘটনা ঘটেছিল। গত ব্রাজিল বিশ্বকাপে পেনাল্টির ঘটনা ঘটেছিল মাত্র ১৩ টি।
এই ২৮ পেনাল্টির মধ্যে ২১ টিকে গোলে রূপান্তরিত করতে পেরেছেন ফুটবলারেরা, বাকি ৭ টি হয়েছে মিস। এই দুটিও বিশ্বকাপ ইতিহাসে রেকর্ড। প্রথমবারের মতো ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণেই এবার এত পেনাল্টির ঘটনা ঘটেছে।
২) সবচেয়ে বেশি আত্মঘাতী গোল:
বেলজিয়ামের বিপক্ষে ব্রাজিলের ফার্নান্দিনহোর গোলটি ছিল এবারের বিশ্বকাপে ১১ তম আত্মঘাতী গোল। এর আগে আর কোন বিশ্বকাপে এতগুলো আত্মঘাতী গোল হয়নি। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬ টি আত্মঘাতী গোল দেখেছিল বিশ্বকাপ। গত বিশ্বকাপে আত্মঘাতী গোল হয়েছিল মাত্র পাঁচটি।
৩) একই দলের কোচ হয়ে চারবার বিশ্বকাপে আসার রেকর্ড:
প্রথম কোচ হিসেবে একই দলের হয়ে চারটি ভিন্ন বিশ্বকাপে আসার রেকর্ড করেছেন উরুগুয়ের কোচ অস্কার তাবারেজ।
তাবারেজের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু সেই ১৯৮০ সালে। উরুগুয়ে দলের দায়িত্ব প্রথমবার নিয়েছিলেন ১৯৮৮ সালে। ১৯৯০ বিশ্বকাপে উরুগুয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু ইতালির কাছে হেরে বাদ পড়তে হয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে।
এরপর উরুগুয়ে দলের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে ২০০২ পর্যন্ত ক্লাব ফুটবলে কোচিং করিয়েছেন, তারপর প্রায় চার বছর কোচিং থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। তাবারেজ কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পর ১৯৯৪, ১৯৯৮ ও ২০০৬ বিশ্বকাপের মূল পর্বেই উঠতে পারেনি উরুগুয়ে। ২০০২ আসরে মূল পর্বে উঠলেও একটিও ম্যাচ না জিতেই প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল। দুরবস্থা বদলাতে তাই আবার তাবারেজেরই শরণাপন্ন হলো উরুগুয়ে ফুটবল ফেডারেশন।
এরপর যে তিনটি বিশ্বকাপে দলের দায়িত্ব নিয়েছেন, তিনটিতেই উরুগুয়েকে মূল পর্বে তুলেছেন। তাবারেজের অধীনেই ২০১০ বিশ্বকাপে ২০ বছর পর বিশ্বকাপের আসরে প্রথম জয় পায় উরুগুয়ে। এমনকি সেবার উরুগুয়েকে সেমিফাইনালেও তুলেছিলেন তাবারেজ। পরের বছর জিতেছিলেন কোপা আমেরিকাও।
৪) সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়:
গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে মাঠে নেমেই ইতিহাস করেছেন মিশরের গোলকিপার এসাম এল হাদারি। কলম্বিয়ান গোলকিপার ফরিদ মনদ্রাগনের রেকর্ড ভেঙে দিয়ে এল হাদারিই এখন বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়। সৌদি আরবের বিপক্ষে মাঠে নামার দিন এল হাদারির বয়স ছিল ৪৫ বছর ১৬১ দিন। চার বছর আগে জাপানের বিপক্ষে বদলি হিসেবে নামার দিন ফরিদ মনদ্রাগনের বয়স ছিল ৪৩ বছর ০৩ দিন।
৫) সর্বকনিষ্ঠ আফ্রিকান খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে গোল:
১৯ বছর ২৩৬ দিন বয়সে গোল করে বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ আফ্রিকান ফুটবলার হিসেবে গোল করার রেকর্ড করেছেন সেনেগালের মুসা ওয়াগ। কিলিয়ান এমবাপের পর এই বিশ্বকাপে গোল করা দ্বিতীয় টিনএজারও তিনি। এর আগে ২০০৬ বিশ্বকাপে ২০ বছর ৮২ দিন বয়সে গোল করেছিলেন ঘানার হামিনু দ্রামান।
৬) গোলশূন্য ড্র ম্যাচ দেখার আগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ:
এই বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত একটিই গোলশূন্য ম্যাচ দেখেছেন দর্শকেরা, ’সি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে ফ্রান্স-ডেনমার্কের ম্যাচে। ৩৭ তম ম্যাচে এসে প্রথম গোলশূন্য ম্যাচ দেখেছে এবারের বিশ্বকাপ, এটিও একটি রেকর্ড। এর আগে ১৯৫৪ বিশ্বকাপে প্রথম গোলশূন্য ম্যাচ দেখার আগে ২৬ ম্যাচ অপেক্ষা করতে হয়েছিল দর্শকদের।
৭) সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ হ্যাটট্রিক:
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজের নামটা খোদাই করে রেখে গিয়েছেন। ‘বি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করার দিন রোনালদোর বয়স ছিল ৩৩ বছর ১৩১ দিন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি বয়সে হ্যাটট্রিক নেই আর কারোর। এর আগে ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ৩০ বছর ৩৩৬ দিন বয়সে হ্যাটট্রিক করে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন নেদারল্যান্ডসের রব রেনসেনব্রিঙ্ক।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুলাই ১০,২০১৮)