দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অভিনেতা, নির্মাতা ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েতকে পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাদীনি ও বিবাদী পূর্বপরিচিতি। তাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির ফলে সন্দেহবশত মামলাটি করা হয়েছে। এছাড়াও এই বিষয়ে তাদের মাঝে আপস হয়েছে।

গেল সপ্তাহের শেষের দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের উপ-পরিদর্শক সজীবুজ্জামান চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। আগামী ১৪ আগস্ট মামলার শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অভিনেতা, নির্মাতা ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েতের আইডির সুস্পষ্ট প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি ওই আইডির কোনো ইউআরএল খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাদীনি ওই আইডির কোনো ইউআরএল সরবরাহ করতে পারেননি।

এছাড়াও ঘটনা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ, ইউআরএল ও সাক্ষী উপস্থাপনের কথা বাদীনিকে বলা হলে তিনি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়েছে বলে জানান এবং আপসনামা পেশ করেন। স্থানীয় তদন্তে গাজী রাকায়েতের স্বভাবচরিত্র ভালো পাওয়া যায় বলে তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সার্বিক তদন্তে ও ঘটনার পারিপার্শ্বিক পর্যালোচনায় বাদীনির আনিত অভিযোগটি বাদীনি ও বিবাদীর মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির ফলে সন্দেহবশত হয়েছে। তাই মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।

‘গাজী রাকায়েত কুটু’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ম্যাসেঞ্জারে ‘অশালীন প্রস্তাব’ দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর শ্যামপুর থানায় অভিনেতা, নির্মাতা ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েতের বিরুদ্ধে ২১ মার্চ মামলাটি করেন কানিজ ফাতেমা নামে এক নারী। মামলা নম্বর ২৬(৩)১৮।

মামলার এজাহারে ওই নারী উল্লেখ করেন, ‘গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘গাজী রাকায়েত কুটু’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে আমার মেসেঞ্জারে কথা বলার সময় বিভিন্ন অশ্লীল, অনৈতিক এবং ধর্মীয় অনুভূতি পরিপন্থী বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ প্রস্তাব দেয়া হয়। তাকে ওইসব আলাপ বন্ধ করতে বলার পরও তিনি জঘন্য রকম যৌন উত্তেজক কথা বলে আমাকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেন, উত্ত্যক্ত করেন।’

মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘গাজী রাকায়েত কুটু’ ফেসবুক আইডি থেকে ওই গৃহবধূকে ‘অশ্লীল, অনৈতিক, ধর্মীয় অনুভূতি পরিপন্থী, ইঙ্গিতপূর্ণ ও যৌন উত্তেজক’ বার্তা পাঠানো হয়। এতে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে তার সম্মানহানি হয়েছে।

এদিকে অধিকারকর্মী অপরাজিতা সংগীতার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে এজাহারে বাদী বলেন, অপরাজিতা সংগীতার বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে গাজী রাকায়েত ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আমাকে ও আমার শুভান্যুধায়ীদের অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন তিনি। এ বিষয় নিয়ে পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনে যাওয়া এবং শ্যামপুর থানায় জিডির কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিভিশন প্রযোজক সমিতি ও শিল্পী সমিতির বিরুদ্ধে তদন্তের নামে কালক্ষেপণের অভিযোগ করে ওই নারী মামলায় বলেন, বিষয়টি নিয়ে আপস-মীমাংসার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে সংগীতার ওপর বিভিন্ন চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আমাকেও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ‘অশালীন প্রস্তাবের’ সেই কথোপকথনের স্ক্রিনশট একটি ক্লোজড গ্রুপে পোস্ট করেন ওই নারী। তার সেই পোস্টের পর ৬ মার্চ গাজী রাকায়েত বলেন, তার দুটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাকড’ হয়েছে। পরে অপরাজিতা সংগীতা নামে একজন অধিকারকর্মী ওই স্ক্রিনশট ফেসবুকে শেয়ার করেন। তখন গাজী রাকায়েত একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, তার কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ছিল, তারা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।

গাজী রাকায়েতের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর ১০ মার্চ ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিভিশন প্রযোজক সমিতি ও শিল্পী সমিতি তদন্তে নামার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সংগঠন তিনটির নেতারা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অপরাজিতা সংগীতাকে শিল্পী সমিতির অফিসে ডেকে পাঠান। এ সময় তারা পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংগীতাকে ফেসবুক পোস্টটি সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ করেন। সংগীতা তাতে সাড়া দেন।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/জুলাই ২১, ২০১৮)