ভার্সিটিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়ন হবে কি?
উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ফল বের হয়েছে। চলছে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হবার কোচিং বাণিজ্য । শিক্ষার্থীরা এখনো জানেন না এবারের ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিতভাবে বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে হবে নাকি আগের মত ‘গোল্লাছুট’ পদ্ধতিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সামনে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে একটি গঠনমূলক এবং পরিপূর্ণ দিক নির্দেশনা থাকা দরকার এখনই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্ব স্ব ভর্তি পরীক্ষার তারিখ প্রকাশ করছে।
গত ৬ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচী শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতি থাকছেনা। একইভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ৭৭ তম সিন্ডিকেট (বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৮) সভায় ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি ঠেকাতে এমসিকিউ পদ্ধতি বা বহুনির্বাচনী প্রশ্ন তুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে হয়তো তাদের জন্য ভালো মনে করে। তার অর্থ কি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে থাকবে না, নাকি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তারা ভাবছেন না?
অথচ ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বৈঠকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আচার্য ভর্তিচ্ছু বিশেষ করে ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের ভর্তিকালীন দুর্ভোগ কমাতে সমন্বিত সহজ ভর্তি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার কথা বলেছিলেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় বিভিন্ন এলাকার মসজিদেও ভর্তিচ্ছুদের অবস্থান করতে হয়েছে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার গাইড লাইন তৈরি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। দুই কমিটি সমন্বয় করে ভর্তি পরীক্ষার নীতিমালা তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল। কমিটিকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নীতিমালা সংক্রান্ত ধারণাপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেবার কথা ছিল। ভর্তি পরীক্ষার আর বেশি দিন বাকি না থাকায় এ বিষয়ে এখনই একটি তাৎপর্যপূর্ণ এবং গঠনমূলক রূপরেখা থাকা প্রয়োজন।
প্রতি বছর আলোচনা হলেও শেষের দিকে এসে এটি আর সফল হয় না। ২০০৮ সালে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়ে বৈঠকে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছিলেন কিন্তু অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন খর্ব হওয়ার আশঙ্কা করায় তা থেমে যায়। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক করেন। কিন্তু. বৈঠকে কয়েকটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় অসম্মতি জানায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১০, ২০১১ এবং ২০১২ সালেও এ বিষয়ে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে। ৭ জুলাই ২০১৩, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপাচার্যদের এক সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে আলোচনা হলে অধিকাংশ উপাচার্যই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। কিন্তু স্বায়ত্তশাসনের অজুহাতে আবারো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাগ্রহ ও আপত্তির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগটি তখনও ভেস্তে যায়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরা সমন্বিত ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও সিলেটে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে তা ভেস্তে যায়।
ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদের কাছে দেওয়ার সময়ে আচার্য শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। পরে ইউজিসি চেয়ারম্যান এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয় উপাচার্যদের নিয়ে সভা করার তারিখ নির্ধারণ করলেও তা আর হয়নি। ২০১৭ সালের ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সুপারিশ করা হয়। গত ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ইউজিসির চেয়ারম্যান বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে দেবার সময় রাষ্ট্রপতি পুনরায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। আর তাই ২০১৮ সালের ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে হবে নাকি আগের মত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা আবার হাবুডুবু খেতে খেতে ছুটে বেড়াবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া তার একটি যৌক্তিক এবং গঠনমূলক দিক নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন! ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যেকার ধোঁয়াশা দূর করা দরকার। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত সময় মত আমাদের নিতে হবে। আমাদের এই দ্বৈত নীতি বা কখনো কখনো বহুমুখী নীতির কারণেই সমস্যার সৃষ্টি হয়, সমস্যা থেকে যায়। সমস্যার আর সমাধান হয় না।
প্রতি বছর কত হাজার ছেলে মেয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে না শুধুমাত্র এই পদ্ধতির কারণে তার হিসেব কি কেউ করেন? গ্রামের অনেক মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অলীক স্বপ্নের মত। গ্রামের অনেক পিতা-মাতা তাদের শত শত মেয়েকে ছুটে ছুটে ভর্তি পরীক্ষা না দেবার পক্ষে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতো অনেক দূরের ব্যাপার। তারা তাদের সন্তানদের ভর্তি করে দেন বাড়ির কাছের কোন কলেজে ডিগ্রি পাশ কোর্সে। মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করা মা, ভূমিহীন কৃষক, দিনমজুর, রিকশা চালিয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, জেলে, কুমার, কামার, শ্রমজীবি মানুষের সন্তানদের কী হবে? কোথায় পাবে এত ফরম কেনার টাকা? দারিদ্র্যের সঙ্গে যাদের নিত্য বসবাস, মধ্যবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে যাদের জন্ম, তাদের বেশিরভাগই এইচএসসি পরীক্ষাটা কোনো রকম কষ্ট করে যারা পার করতে পারে, তাদের অনেকের পক্ষেই আর সম্ভব হয় না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। পিছিয়ে পড়ছে গ্রামের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেকেই একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নিয়ে যেমন ভাবেন না তেমনি দিনাজপুর থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে খুলনা, খুলনা থেকে রাজশাহী, রাজশাহী থেকে সিলেট, সিলেট থেকে ঢাকা ঘুরে ঘুরে ভর্তি পরীক্ষার কথা কল্পনাও করতে পারেন না। এমনও হয় যে, সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দিনে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে। আর অতিরিক্ত অর্থ খরচের বিষয়টি তো আছেই। হায়রে অভাগা শিক্ষার্থী আর তাদের উচ্চশিক্ষার অলীক স্বপ্ন!
অনেকে মনে করেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে পরিমাণ টাকা আয় করতে পারতো তা হয়তো আর পারবে না। বড় একটা আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সমন্বিত বা গুচ্ছপদ্ধতির ভর্তিতে আয় কমে যাবে ভেবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি আর সামনের দিকে এগোচ্ছে না। অবশ্য গত কয়েক বছর ধরেই মেডিকেল কলেজসমূহে ভর্তিতে সমন্বিত পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব হয়েছে। মেডিকেলের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা না হওয়ায় একটি আসনের বিপরীতে শতাধিক বা তারও বেশি শিক্ষার্থীকে লড়াই করতে হচ্ছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন। এটাই যেন তাদের কাছে নিয়ম বলে মনে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে পুঁজি করে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা কোচিং সেন্টারগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষার আয়োজন করা হলে আসন প্রতি প্রতিযোগীর সংখ্যা যেমন কমে আসবে তেমনি অভিভাবকদের হয়রানি ও অর্থ খরচ কমে যাবে। কোচিং বাণিজ্যও নিরুৎসাহিত হবে। গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোর ছেলে মেয়েরা আরো অধিকহারে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। গ্রামে নারী শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। আর তাই সবাইকে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে হবে, কারা প্রশ্ন করবে, কীভাবে সে প্রশ্ন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে, প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা রক্ষা কীভাবে হবে, ফল প্রকাশে স্বচ্ছতা রাখা যাবে কীভাবে, পরীক্ষার আবেদন ফরম কেমন হবে, সহজ সফটওয়্যার প্রস্তুতকরণ, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সম্ভাবনা থাকবে কিনা, প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার সম্ভাবনা থাকবে কিনা ইত্যাদি অনেক কিছু ভাববার বিষয় রয়ে গেছে। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে সঠিক দিক নির্দেশনা থাকা দরকার এখনই। নইলে এবারও নানা অজুহাতে ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত করা সম্ভব হবে না। আর সম্ভব না হলে আমাদের উদাসিনতা, অমানবিকতা ও মনুষ্যত্ত্বেবোধহীনতা প্রকাশ পাবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্যের অভিপ্রায় মানে অলিখিত আইন, যা অখণ্ডনীয় বলে প্রতীয়মান হওয়াটাই কাম্য।
সমন্বিত অথচ গুচ্ছভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে কিছু বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে-
(১) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধানে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির মাধ্যমে কমিটি করে বিভিন্ন অনুষদের পরীক্ষা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে গোপনীয়তা রক্ষা করে আলাদা করে ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে। তাতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশিদারীত্ব থাকবে।
(২) যেসব বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে পরীক্ষা নেবে, ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটি গঠনের মাধ্যমে স্থান, কাল আগে থেকে ঠিক করে নিয়ে অত্যন্ত সহজ করা যেতে পারে ভর্তি পরীক্ষা।
(৩) সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিগণের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদগণের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে বা বুয়েটে বা সুবিধাজনক কোন স্থানে সম্পূর্ণ আলাদা একটি সেল খুলে অন্য সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা নিয়ে সমন্বিত অথচ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
(৪) টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যতীত অর্থাৎ প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি প্রযুক্তি ও ভেটেরেনারি, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যতীত বাকি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়) আগেই ইউনিট নির্ধারণ করে নিয়ে 'এক ইউনিট এক প্রশ্ন' এভাবে পরীক্ষা নিতে পারে।
(৫) দেশের সব প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; যেমন- বুয়েট, ডুয়েট (ডুয়েটে যেহেতু পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়, সেহেতু এ ব্যাপারে আলোচনা স্বাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।), রুয়েট, চুয়েট, কুয়েট একসঙ্গে 'এক ইউনিট এক প্রশ্ন' এভাবে পরীক্ষা নিতে পারে ।
(৬) দেশের সব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে 'এক ইউনিট এক প্রশ্ন' এভাবে পরীক্ষা নিতে পারে।
(৭) দেশের সব কৃষি প্রযুক্তি ও ভেটেরেনারি বিশ্ববিদ্যালয় 'এক ইউনিট এক প্রশ্ন' এভাবে পরীক্ষা নিতে পারে।
(৮) টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একসাথে 'এক ইউনিট এক প্রশ্ন' এভাবে পরীক্ষা নিতে পারে।
(৯) দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির জন্য পছন্দের সময় শর্ত আরোপ করে দিতে পারে। শর্তপূরণ না করলে শিক্ষার্থীরা ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দে রাখতে পারবে না বলে তারা ভর্তিও হতে পারবে না। আর তাই, এমন কথা কোনভাবেই বলা যাবে না যে, ওমুক বিশ্ববিদ্যালয় ব্রাহ্মণ, ওমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা আলাদা ঐতিহ্য আছে। সবাই সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসলে সমন্বিত অথচ গুচ্ছভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিলেও ব্রাহ্মণ্যবাদ, ঐতিহ্য সব রক্ষা করা যায়, সেই পথ আলোচনার মাধ্যমে বের করে নিতে হবে।
(১০) শিক্ষার্থী বাছাই মূল কাজ, এটা মাথায় রেখে ইউনিট যত কম করা যায়, সবার জন্য ততই ভালো হতে পারে বিষয়টি।
(১২) পরীক্ষার কেন্দ্র হতে পারে পরীক্ষার্থীর পছন্দের নিকটবর্তী কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
(১৩) মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির মতো পছন্দক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশনের সুযোগ রাখা যেতে পারে।
(১৪) ফরমের মূল্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করে নিতে পারে যেন তা উভয়পক্ষের জন্য ভালো হয় এবং খুব বেশি না হয়।
(১৫) সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে এভাবে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে (৪, ৫, ৬, ৭,
৮) ভাগ করে সমন্বিত অথচ গুচ্ছভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।
(১৬) আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সম্ভাবনার কোন ক্ষেত্র যেন তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সমস্যা থাকবে, সমস্যা আসবে তবে আলোচনা শুরু হলে, এক দু'বার পরীক্ষা হয়ে গেলে আরও ভালো ভালো পরামর্শ আসবে, যা এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। কোন বিশ্ববিদ্যালয় বড়, কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছোট কিংবা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ঐতিহ্য আছে, তা না ভেবে বরং আসুন ভাবি, জাতি হিসেবে আমরা কত উদার, জাতি হিসেবে আমাদের যে ঐতিহ্য আছে তার কথা। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আমাদেরই সন্তান। ওদেরকে ভালোভাবে সুযোগ করে দিয়ে বড় করে তোলা আপনার আমার সবার দায়িত্ব। সময় অনেক আগেই এসেছে, আমরা এগিয়ে আসতে পারিনি। তাই এখনই সময় কিছু করার। বিষয়টি নিয়ে সরকার ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে আসবেন, সেই প্রত্যাশা করছি। সময়ের চাহিদার কারণে অনেক পুরানো ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, আসতে হয়। সবার জন্য যা কল্যাণকর তার সবকিছু উদারনৈতিকভাবে গ্রহণ করা উচিত। সরকার, ইউজিসি, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানবতার হাত প্রসারিত করলে এবং সবাই যথেষ্ট আন্তরিক হলে এবারই সমন্বিতভাবে বা গুচ্ছভাবে কিংবা সমন্বিত অথচ গুচ্ছভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবার সমন্বিত বা গুচ্ছভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারেন। তাতে জাতীয় নির্বাচনের বছরে একদিকে যেমন বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে তেমনি ভোটারের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে নিষ্পাপ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিবাবকদের দোয়া সরকারের চলার পথের পাথেয় হবে। স্বায়ত্তশাসন ঐশী বাণী নয়, তা মানুষেরই তৈরি। স্বায়ত্তশাসনও যথেষ্ট মানবিক হওয়া দরকার, হওয়া উচিতও। তাই আসুন সমুদ্র বিজয়, স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি কিংবা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের মত উচ্চশিক্ষার মহাকাশে মানবতা ও শিক্ষার দ্বীপশিখাসম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও প্রতিস্থাপন করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলি।
মোহাম্মাদ আনিসুর রহমান : পি.এইচ.ডি. গবেষক, আন্তজাতিক সম্পর্ক ও বৈশ্বিক সুশাসন, জেঝিয়াং ইউনিভার্সিটি, চীন ও শিক্ষক সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুলাই ২৭, ২০১৮)