দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: টানাটানির সংসার। তাই মেধাবী মেয়েকে ভালো কলেজে ভর্তি করাতে পারলেও এক মাসেও দিয়া খানম মীমের সব বই কিনে দিতে পারেননি তার বাবা-মা।

রোববারই মেয়েকে কলেজে দিয়ে বাকি বইগুলো কিনে বাসায় ফিরেছিলেন তার মা রোকসানা বেগম। কিন্তু ওই দিন আর মীমের বাসায় ফেরা হয়নি। বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে তাকে জীবন হারাতে হয়েছে। মায়ের কেনা বইগুলো আর স্পর্শ করা হয়নি মীমের।

একদিন পর মেয়ের জন্য কেনা বইগুলো নিয়েই বিলাপ করছিলেন রোকসানা বেগম।

তিনি বলছিলেন- কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও টাকার অভাবে মেয়ের কিছু বই কেনা বাকি ছিল। এ জন্য ক্লাসে পড়া দিতে পারত না। টাকা জোগাড় করে রোববার সেই বই কেনা হয়। কিন্তু মেয়ে সেই বই ধরেও দেখতে পারল না। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।

মেয়েকে হারানোর পর তার মা এখন পাগলপ্রায়। যারা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন তারাও চোখের পানি মুছছিলেন।

সোমবার মহাখালীর দক্ষিণপাড়া মসজিদের পাশে মীমদের বাসায় কান্না, আহাজারি আর বিলাপে পরিবেশটা শোকে ভারী হয়ে ওঠে।

রোববার শহীদ বীরবিক্রম রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রী মীমসহ দু'জন বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান।

রোকসানা বেগম জানান, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে, তিনি এর বিচার চান।

মেয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কাঁদছিলেন এই মা। বলছিলেন, প্রতিদিন মেয়েকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসেন। বাসায় না ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন। এখন আর তার সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে না।

রোকসানা বেগম আরও বলেন, মেয়েটা এভাবে চলে যাবে বলেই সবাইকে আপন করে নিয়েছিল। এক মাস আগে কলেজে ভর্তি হয়েছিল। এই সময়েই সবাইকে আপন করে নেয়। কলেজ থেকে ফিরেই সারাদিনের ফিরিস্তি দিত। মেধাবী মেয়েটা এ প্লাস পেয়েছিল। গান-বাজনা পছন্দ করত। অনেক কষ্টে ওর সব চাওয়াই পূরণের চেষ্টা করতেন তিনি।

মীমের বাবা জাহাঙ্গীর ফকিরও পেশায় বাসচালক। তিনি ২৭ বছর ধরে দূরপাল্লার বাস চালান। ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে একতা পরিবহনের চালক তিনি। বাসের চাকায় আদরের মেয়েকে হারিয়ে এই বাবা কখনও বিলাপ করছিলেন, কখনও রাগে-ক্ষোভে আবার চিৎকার করছিলেন।

বলছিলেন, ২৭ বছর ধইরা বাস চালাই, একটা অ্যাক্সিডেন্টও করিনি। আর সেই বাসই কেড়ে নিল আমার মেয়ের প্রাণ।

এই কষ্টে আর বাসই চালাবেন না বলে জানান শোকাহত জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ঢাকায় যারা বাস চালায়, তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নাই। হেলপাররা এক বছর পরই চালক হয়ে যায়। তিনি চালকের প্রশিক্ষণ দিতে চান। যাতে আর কোনো বাবার বুক খালি না হয়।

শোকের মধ্যে অভিমানের কথাও শোনা গেল জাহাঙ্গীর ফকিরের মুখে। তিনি বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে তিনি পরিবহন লাইনে আছেন। মহাখালী বাস টার্মিনালে শ্রমিকদের নেতাও ছিলেন। কিন্তু তার মেয়ের এমন করুণ মৃত্যুর পর ফেডারেশনের কেউ খোঁজ নেয়নি।

চোখ মুছতে মুছতে জাহাঙ্গীর বলেন, আমাগো অভিভাবক মন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি নাকি আমার মেয়েসহ দুইজনের মরার কথা হাসতে হাসতে বলছিলেন। এই কথা শুইনা খুব কষ্ট পাইছি।

তিনি আরও জানান, কে কী বলল এটা তার বিষয় নয়। তিনি শুধু মেয়ে হত্যার বিচার চান।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুলাই ৩০, ২০১৮)