দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে মঙ্গলবার (৩১ জুলাই)। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে সকাল ১১টায় এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। ভোটের আগে টাকার ছড়াছড়ির প্রভাব যেন মূল্যস্ফীতিতে না পড়ে, সেই চেষ্টাই করা হবে।

গত অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন মেয়াদের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছিলো ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছিলো ৬ শতাংশ। মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিলো ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

চলতি বছর জাতীয় নির্বাচনের কারণে কালো অর্থের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিবছর ২ বার মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও সতর্ক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ জোগান যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে নজর রাখা হবে।

মুদ্রানীতি প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে কারণে নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

নির্বাচনকে ঘিরে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে মূলস্ফীতি যেন না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

একই সঙ্গে নতুন মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লাগাম টানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ জোগানে সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতির ঘোষণা আসতে পারে। কেননা, জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের যে লক্ষ ধরা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি বিতরণ হয়েছে।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুলাই) মুদ্রানীতিতে তা বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়।অর্থবছর শেষে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরের (২০১৭-১৮) দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি সফল হয়েছে। ওই সময়ে দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়েছে।

তাই গত মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণই হবে নতুন মুদ্রানীতির প্রধান উদ্দেশ্য।

অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। আর পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

বরাবরের মতো এবারও নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ঘোষিত আর্থিক নীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে প্রতি অর্থবছরে দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/জুলাই ৩১, ২০১৮)