বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ শুরু
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০১৮’ শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচি চলবে ১ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হবে সপ্তাহটি। এ বছর প্রতিপাদ্য হলো ‘মায়ের দুধ পান সুস্থ জীবনের বুনিয়াদ’।
১৯৯২ সাল থেকে দেশে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। এ আয়োজনে শিশুর বুকের দুধ পান করার সুফল তুলে ধরে নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
এ দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, মায়ের দুধই শিশুর প্রধান খাদ্য। শিশু খাদ্যের প্রাকৃতিক ও অত্যন্ত নিরাপদ উৎস মায়ের দুধ। বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০১৮ এর মূল প্রতিপাদ্য ‘মায়ের দুধ পান : সুস্থ জীবনের বুনিয়াদ’ যথার্থ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, শিশুর পুষ্টি এবং শারীরিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য উপাদান মায়ের দুধে বিদ্যমান। বিশেষজ্ঞদের মতে- পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ শিশুর পরিপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করে। জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ দিলে ৩১ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু রোধ, ১৩ শতাংশ শিশুমৃত্যু এবং ৬ মাস বয়সের পর মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি, বাড়তি খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে ৬ শতাংশ শিশুমৃত্যু কমানো সম্ভব। সমাজ ও রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন ও সুস্থ সবল জাতি গঠনে মায়ের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার পাশাপাশি সন্তানকে স্তন্যদানে মায়েদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিকল্প শিশুখাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে কর্মজীবী মায়েদের সন্তানকে স্তন্যদানে উৎসাহিত করার পাশাপাশি কর্মস্থল ও গণপরিবহণে মায়েদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
তিনি কর্মজীবী মায়েদের মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা বিধানে সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এদিকে বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাতৃদুগ্ধ পান শিশুদের পুষ্টিপূরণ এবং সম্মিলিত শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটায়। তিনি বলেন, একটি সুস্থ ও মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বৃদ্ধি এবং মাতৃ ও শিশু পুষ্টি উন্নয়নের কার্যক্রম টেকসই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। প্রতি জেলায় একজন করে পুষ্টিবিদ নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় একজন করে পুষ্টিবিদ নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯৯৭টি সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্রে শিশুবান্ধব হাসপাতাল করার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এইচপিএনএসপি ও দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্ম পরিকল্পনার আওতায় মাতৃ ও শিশু পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া গুড়া দুধ ও কৌটাজাত শিশু খাদ্যের ব্যবহারকে সর্বনিম্ন স্তরে নামিয়ে আনতে ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও তা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন) আইন, ২০১৩’ ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটি বেতনসহ ৬ মাসে উন্নীত করেছে। সরকারি ও বেসরকারি অফিসে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপন করেছে। কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল থেকে কর্মজীবী মায়েদের ভাতা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনেশিয়েটিভ (ডব্লিউবিটিআই) ২০১৫ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১৫২টি দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান এবং ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড এ্যাকশন নেটওয়ার্ক (আইবিএফএএন) ২০১৮ এর রিপোর্ট ‘স্টেট অব দ্য কোড নাই কান্ট্রি’ অনুযায়ী আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে।
তিনি ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’-২০১৮ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
এবার মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় পুষ্টিসেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় বুধবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজন উপলক্ষে ডাব্লিউএইচওর অফিসিয়াল পেইজে বলা হয়েছে, শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে বুকের দুধ সর্বোত্তম। সন্তান জন্ম নেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই বুকের দুধ পান করানো শুরু করতে হবে এবং ছয় মাস বয়স পর্যন্ত কেবল বুকের দুধ চলবে। সম্পূরক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার শুরু হবে এরপর থেকে। তবে এর পাশাপাশি দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে, কখনো কখনো এর থেকে কিছু বেশি সময় পর্যন্তও বুকের দুধ দেওয়া যেতে পারে।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/আগস্ট ০১, ২০১৮)