দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান এবং পরিবহন নেতা আটক ও গত তিন দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর-আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধে রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে।

বুধবার (১ আগস্ট) সকাল থেকে মিরপুর, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, মিরপুর, সায়েন্সল্যাব ও উত্তরায় বিক্ষোভ চলছে। শিক্ষার্থীদের ভাঙচুর ও মোবাইল কোর্টের অভিযান এড়াতে রাজধানীর প্রায় সব রুটেই বাস চলাচল সীমিত বা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

ফলে অফিসমুখী যাত্রী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। গণপরিবহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে ও রিকশায় যেতে হয়েছে গন্তব্যস্থলে। সড়কে বাসের অপক্ষোয় হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।কয়েকটি বাস এলেও তাতে সবাই উঠতে পারছেন না। তবে দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন চলতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে দিতে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এবং জসীমউদ্দীন মোড়ে অবস্থান নিয়েছে থেকে উত্তরা ইউনিভার্সিটি, মাইলস্টোন কলেজ, স্কলাস্টিকা, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এসময় বিমানবন্দর উত্তরা রোডে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সকাল ১০টা থেকে ফার্মগেট ওভারব্রিজের নিচে অবস্থান নিয়েছে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকালের মতো আজও ফার্মগেটের দুইপাশের সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। তেজগাঁও থানা পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

এই সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১০ এ জড়ো হতে থাকেন। পরে বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মিরপুর-১৪ নম্বর যান শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সারজ ইন্টারন্যাশনাল এবং ভাষানটেক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। পরে তারা ফের ১০ নম্বরে এসে সড়কে অবস্থান নেয়।

সকাল সোয়া ১১টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজের শিক্ষার্থীরা পলাশীতে জড়ো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে তারা আজিমপুর সড়কে অবস্থান করবে।

এদিকে শাহবাগের রূপসী বাংলা হোটেল থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। এছাড়া চানখাঁরপুলেও বিক্ষোভ চলছে।

উত্তরা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহফুজার রহমান বলেন, ছাত্ররা দলবদ্ধ হয়ে হাউস বিল্ডিংয়ের সড়কে নেমেছেন। তারা দলবদ্ধ হয়ে বিএনএস সেন্টারের দিকে গিয়ে সড়ক বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে তারা কোনো গাড়ি ভাঙচুর করেননি। আমরা গাড়ি ডাইভারশনের চেষ্টা করছি।

পল্লবীর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নিজাম বলেন, পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীরা একটা মিছিল নিয়ে গেছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

শাহবাগের এডিসি মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করছেন।

পরিবহন শ্রমিক আন্দোলন
এক পরিবহন নেতাকে আটক, গত ৩ দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে রাজধানীর শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী, চিটাগং রোড, মাতুয়াইলে সড়কে অবরোধ করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এসব সড়কে ঢাকার বাইরে থেকে আসা কোনো দূরপাল্লার বাস ঢাকায় ঢুকতে দিচ্ছেন না তারা।

পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যানচলাচল চলাচল করছে না মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারসহ আশপাশের সড়কে। এসময় ফ্লাইওভার দিয়ে অনেককে পায়ে হেটে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা গেছে।

চালকদের লাইসেন্স যাচাই
রাজধানীর গাবতলী, বাড্ডা, মহাখালী, বনানী কাকলীসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ট্রাফিক সার্জেন্টরা বাস থামিয়ে বাস ও লেগুনা চালকদের লাইসেন্স, রুট পারমিট ও গাড়ির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে পুলিশ।

গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী।

চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যাওয়া দুই শিক্ষার্থী হলেন- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।

ওই ঘটনায় জাবালে নূরের তিন গাড়ির দুই চালক ও দুই হেলপারকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১। এর আগে নিহত মিমের বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/আগস্ট ০১, ২০১৮)