দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : রাস্তায় নেমে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছে হাজারো শিক্ষার্থী। তাদের সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন দেশের তারকা শিল্পী, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও নির্মাতারা

বাস চাপায় শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সজীব এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মিম নিহত হয় গত ২৯ জুলাই(রবিবার)। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয় ১৩ শিক্ষার্থী। এমন মর্মান্তিক ঘটনা মানতে না পেরে রাস্তায় নামেন সহপাঠিরা। সহপাঠির মৃত্যুর বিচার দাবী ও নিরাপদ সড়কের দাবীতে শুরু করেন আন্দোলন। ধীরে ধীরে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে যায় গোটা শহরে। গত দু’দনি ধরেই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে হাজারো শিক্ষার্থী। তাদের সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন দেশের তারকা শিল্পী, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও নির্মাতারা। তারা বলছেন, ‘হোক প্রতিবাদ’।


দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল এলআরবি-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও দেশের অন্যতম সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু বাস চাপায় শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় বলেন,যার যায় শুধু সেই জানে জীবনে কি হারায়। অন্য কারো বোঝার কোনো উপায় নাই।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সমর্থন করে ‘অবসিকিওর’ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য টিপু বলেন, নিরাপদ রাস্তা চাওয়া অন্যায়? যেখানে সেখানে বেপরোয়া চালকের জন্য জীবন ক্ষয়, ফিট গাড়িগুলোর ফিটনেস দেখার জন্য রাস্তায় ১৪ বার দাঁড় করানো হয় আর পাশাপাশি মুড়ির টিন মার্কা বাস ট্রাক নির্বিবাদে চলছে। সমস্যার গোড়ায় না যেয়ে বাচ্চা বাচ্চা কিছু ছেলে মেয়েদের ওপর পুলিশের লাঠি/ লাথি আর কতদিন? চলুক অবরোধ আমি সঙ্গে আছি।


শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন প্রতিহত করার চেষ্টার সমালোচনা করেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে ফারুকী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কিছু প্রতিবাদী ছবি শেয়ার করে বলেন, এই রকম যাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, ইতিহাস চেতনা, আর ডিটারমিনেশন, তাদেরকে ট্রাক উঠিয়ে, মাস্তান পাঠিয়ে, পুলিশ দিয়ে কোনওভাবেই দাবায়ে রাখা সম্ভব না। সরকারের উচিত দ্রুত এই বিষয়ে উচ্চপর্য়ায়ের কমিটি করা। মাকসুদ ভাইয়ের গানের মতো ধুনফুন “তদন্ত কমিটি” না। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বানানো কমিটি। পরিবহন খাতের মাফিয়াতন্ত্র ধ্বংস করবে যে কমিটি, নিরাপদ সড়কের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর নতুন দিনের নিয়মনীতি বানাবে যে কমিটি। আর কালক্ষেপণ করা উচিত হচ্ছে না।


ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ওমর সানি শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে লিখেন, দয়া করে বাচ্চাদের গায়ে হাত দেবেন না। তারা কোনো আসনের নমিনেশন পাবার জন্য পথে নামে নাই, তাদের দাবি কেবল পথের নিরাপত্তা। এ দেশের পরবর্তী কর্ণধার এই বাচ্চারাই। এখনো অনেক বাচ্চা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। বাচ্চাদের মাথায় লাঠির আঘাত নয়, ভরসার হাত রাখুন। মা-বাবাদের পথে নামতে বাধ্য করবেন না দয়া করে। ওরা আমাদের সন্তান। নাড়ি ছেঁড়া ধন! জারজ নয়!


অভিনেত্রী বন্যা মির্জা ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় তার এক পোস্টে লিখেন, ’কাল ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামে থেমে পড়েছিল ঢাকা। তবু পথচলতি মানুষেরা কেউ বিরক্ত হননি একটুও। যেন বা আজকের ট্রাফিক জ্যাম ও কয়েক ঘণ্টা থেমে থাকা ঢাকা নগরী আমাদের জন্য খুব জরুরি ছিল।’


শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নেমে আসাকে ইতিবাচক ভাবে দেখছেন নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন। ফেসবুকে তিনি বলেন, গণপরিবহন ব্যবস্থার নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে, ভাঙ্গা রাস্তাঘাটের বিরুদ্ধে, ক্ষমতাবানদের কুৎসিত হাসির বিরুদ্ধে, নিরাপত্তাহীনতা আর ক্রমাগত সড়কে খুনের বিরুদ্ধে এই কিশোর-কিশোরী বিদ্রোহ এক পশলা নতুন আগামীর স্বপ্ন।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবীতে শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে অভিনেত্রী তিশা বলেন, ছোট ছোট ঐ ছেলে মেয়েদের কথা মাথা থেকে সরাতে পারছি না। আমাদের সোজা কথা, রাজপথ নিরাপদ করা হোক। প্রয়োজনে নতুন আইন করা হোক, ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে বেপরোয়া গাড়ি চালকদের মনিটর করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হোক। মোট কথা এই বিষয়টাকে আর এইভাবে ছাড় দেওয়া উচিত নয়। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। কিন্তু নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটার ব্যবস্থা করে রাখার নাম খুন।
সংগীতশিল্পী, নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন নিজেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আকুতি জানিয়েছেন এভাবে, আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বাংলাদেশের সচেতন মানুষগুলোর সবাইকে নিয়ে শক্তভাবে হাতে হাত মুঠোবন্দী করে দাঁড়িয়ে পড়ি রাজপথের বাসগুলোর সামনে। দ্রুতগতিতে বাসগুলো পার হয়ে যাক আমাদের রক্তাক্ত করে। কারণ রক্তাক্ত তো হচ্ছিই প্রতিনিয়ত- ভেতরে বাইরে।


ছোট পর্দায় আরেক অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি কবি কাজী নজরুলের রণ-সঙ্গীতের দুই লাইন তুলে ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত/আমরা আনিব রাঙা প্রভাত……চল্ চল্ চল্’। আর ঘরে বসে থাকা যায়না, আমার মন উত্তাল তোমাদের সাথে! আপনি আছেনতো ?
প্রতিনিয়ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আপডেট রাখছেন নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ। ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, বাচ্চাগুলোকে রক্তাক্ত করা কি খুব দরকার? ওরা কি দেশের সব চাইতে বড় বড় দুর্নীতিবাজ? ওরা কি বিরাট ব্যাংক ডাকাত? ওরা কি সোনা চোর নাকি কয়লা চোর নাকি খুনী বাস ড্রাইভার, হেলপার? নাকি সব ধর্ষক? নাকি সব সরকার বিরোধী? জামাত নাকি বামাত? আমার আবারো একি প্রশ্ন বাচ্চাগুলোকে রক্তাক্ত করা কি খুব দরকার?
ব্যান্ড দল ‘জলের গান’-এর সদস্য সাইফুল জার্নাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন করে লিখেন, আর কিছু না হউক এক বোতল পানি বাচ্চাদের জন্য নিয়ে রাস্তায় দাড়ান। চিৎকারে চিকন গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
শুটিং বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সঙ্গী হতে রাস্তায় নামছেন জানিয়ে এই প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা তৌসিফ বলেন, আর চুপ থাকতে পারছি না। শুটিং থেকে পারমিশন নিলাম, দুপুরে নামছি তোমাদের সাথে উত্তরায়। আমার কোন সহকর্মি ভাই-বোনেরা নামতে চাইলে খুশি হব।


(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুলাই ০২,২০১৮)