পাঁচটি কবিতা ।। টিপু সুলতান
আমার আত্মজয়
আমার বুকের উপর
আপেল কাটা ছুরি নিয়ে বসে আছে
একদলা বিপরীত বাতাসের কালপিটে ঝড়-
আহত করে চেতনা,
জীবন্ত পোস্টারের বাড়িঘর।
নিঃস্ব হয় স্বপ্নাদ্য দুহাতে আঁকানো পৃথিবী এবং উল্লাস,
সমস্ত স্বাধীনতা ও হৃদয়ের পলক মেশানো দলিলপত্র;
ব্যাঙ ডাকা শব্দের আড়ালে
ঠাসাঠাসি শেকড়বাকড়
চুপমারা ডাঙায়
পিপীলিকার দন্তকামড়ে বারবার ছোঁ মারে-
বারবার জিবখানি
ও শুড়ুক টেনে খালাস করে উন্নত জন্ম;
আর আমি মরে যাবার আগে
ঈষৎ রঙের হাড়গোড়
প্রেরণ করি ঈশ্বরের পরে যে ঈশ্বর আমার আত্মজয়
সৃষ্টি সুখের উল্লাস জানে।
তরুণ ঘাসে দিনের শুরু
চড়ুইপাখি ঠোঁট বাঁকিয়ে
দেহের ভেতর নরম পাখায়
শক্ত ডানায় বাতাস কেটে আকাশ কিংবা বৃক্ষচারী
প্রজাপতির দিন পালানো-
মাঠের দেশে তন্নতন্ন
খুঁজলো নেচে ধান কোলাচে আইলভরা সবুজপত্র,
তরুণ ঘাসে দিনের শুরু
শিডিউল করা নতুন সকাল,
মধ্যদুপুর-পাল দোলানো ফড়িং বেলা নাটেরগুরু।
শেষ বিকেলে পাতার বাঁশি বাজায় কেশে
অলসমাখা গুন'গুণাগুণ কিশোর বেলা-
পড়শিতলায় বাতাস ফেরা
খোলাচুলে লোবান গন্ধে মিটকে চোখে মুগ্ধ হাসে,
চুলের ভেতর আঙ্গুল গুঁজে
ইচ্ছেমতন রূপ কিশোরী
স্বপ্ন আঁকে একের ভেতর কাবিননামার দুই মাধুরে
উঠল বলে ভালবাসি...
উততালীয় পাখির ডানা
গৌড় প্রাঙ্গণের কোলে বৈকালীন গোধুলী ঢলে যায়।
এবং আদি সাজ ফেলে
সন্ধ্যার মোড়কে গুছিয়ে আসে
তাজাফুলের ক্লাপে বানানো নতুন আগমনীর দেশ।
দোতলা ভবনে সোনালি রঙ
পলিশকরা থরথরি আড্ডার বাতি
ও নক্ষত্রপল্লির আকাশে
উপচে পড়া আলোর নদীতল,
যুগক্ষয়ের ছায়াদেহ
মুক্তির চিত্রণে কেশে ওঠে ক্লান্ত হাঁপানির মুখ;
নিরিবচ্ছিন্ন রক্তাক্ত মাটির পাটিতে
বিজয়ীর সতন্ত্র নাগরিকের জোড়া পা,
জীবিত গাছের যুগখ্রিষ্ট
বন্দী খাঁচায় উততালীয় পাখির ডানা,
হাড় পাঁজরের কলোনিতে
নড়ে যায় দেদুল শিল্পের স্বর সংগ্রাম নিঃশ্বাস।
রাতের আবহম আলো উপেক্ষা
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আগমনীর দেশ
মুক্ত-স্বাধীনতার বার্তা ওড়ায়!
সাহসী হস্তশিল্প
জলে গর্ত খুঁড়ে আগুন রেখো।
মনের ভেতর থেকে সাহসী হস্তশিল্পে সাজিয়ে ফেলো
কাঁচা মৃহৎ পণ্যের রকমারি বিপণী;
নকশা কর সমুদ্রের গায়ে সামুদ্রিক ঝিনুকের,
পালতোলা পাঞ্জেরীর লঞ্চ, স্টিমার ও জাহাজের।
এঁকে রেখো গম,ভুট্টা,ধানের বীজ...
এবং জল ভিড়ে যাওয়া বালুতটে পলভূমির গৃহে
একটি মানবিক গাছ জন্মাক
ফুল ফুটুক-আকাশ বিশালে সারা পৃথিবী।
ঘুমঘেরা নাদানেরা জেগে দেখুক
পাখি, পিঁপড়ে, মৌমাছি,
প্রজাপতিরা এগিয়ে এসেছে
দারিদ্র্য, দোআচঁলা চাষাবাদের রিলিফ উপেক্ষা সারিসারি;
তারপর!মাটিতেই ছড়িয়ে পড়বে
রোপিত ভাণ্ডার
ভূমিস্তুপে আশাতীত আগামীর স্যাম্পান ব্যাপ্তি!
সপ্তবর্ণার রঙ
তাতানো গরম, জ্যৈষ্ঠমাস।
বিষণ্ণতায় প্রকৃতির মস্তিষ্ক ক্লান্তের নেশায় হাত নাড়ে,
তাতিয়ে ওঠে নগর জীবন।
এভাবে সপ্তবর্ণার রঙ গুপ্ত হয়ে যায়
পিচঢালা পাথরের সংসারে-
মাছ কাটার মতন
আঁশটে চাকায় ও শুঁকনো ধুলোয়।
ঘড়ির কাটায় ভাইরাল হয়
দিনদিন আকাশের তাঁবু থেকে ধূসর পৃথিবী-
এবং উতপ্ত বাতাস ঢুকে পড়ে মানসিক হাঁড় পাঁজরে;
অথচ
আমার মন ভালোবাসত ফুল, পাখি, নদী, উত্তাল সমুদ্র-
ছায়ার ভিড়ে প্রেমিকের কাব্যিক উচ্ছল।
আমার চোখ ভালোবাসত পাহাড়চূড়োর ঝর্ণা,
মনের জায়গায় মন রাখা সঞ্জীবিত সংগ্রাম-
চুপিচুপি ঋতুর পরিবর্তন!
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ০২,২০১৮)