দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ এবং ঘাতক বাসচালকের ফাঁসিসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানী ঢাকা অচল হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবারও (২ আগস্ট) সাত দফা দাবি আদায়ে সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।

শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সড়কে গণপরিবহন কম চলাচল করতে দেখা গেছে। আর যে কয়েকটি গাড়ি চলছে সেগুলোতেও উঠতে যাত্রীদের ধস্তাধস্তি করা লাগছে। ফলে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মিরপুর-মতিঝিল, মোহাম্মদপুর-সায়েদাবাদ, উত্তরা-মতিঝিল রুটে চলাচলকারী নিয়মিত বাসগুলো সড়কে প্রায় দেখাই যায়নি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দেখা যায়, রোকেয়া সরণি, প্রগতি সরণি, এয়ারপোর্ট রোড, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ প্রায় ফাঁকা। কয়েকটি বাস চলাচল করছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় সংখ্যায় অত্যন্ত নগণ্য।

সকালে মিরপুর যাত্রাবাড়ী দনিয়া থেকে উত্তরা পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে দুএকটি গাড়ি চলছে। সেগুলোতে অনেক ধস্তাধস্তি করে অফিসগামীদের উঠতে হচ্ছে চরম ভোগান্তির মধ্যে। তবে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় সকালে সড়কে কোনো স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি।

মিরপুরের বাসিন্দা আফরিন নেওয়াজ জানান, তিনি মিরপুর ১০ নম্বরে সকাল ৮টা থেকে অপেক্ষা করছেন বাসের জন্য। যাবেন গুলিস্তান। কিন্তু এক ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও লোজজনের ভিড়ে বাসে উঠতে পারেনি।

এদিকে মালিবাগের বাসিন্দা রফিকুল জানান, তিনি আবদুল্লাহপুর যাবেন। বাসস্টান্ডে লোকজনের ভিড়ে ঠেলাঠেলি দেখে তিনি উঠতে পারছেন না। এমন আরও অনেকের, কর্মস্থল বা গন্তব্যে যেতে বাসের অপেক্ষায় সময় গুনছেন। এতে সবার ভোগান্তী যেন কমছেই না।

গত রবিবার জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই ছাত্রছাত্রীর মৃত্যুর পর থেকে শিক্ষার্র্থীরা আন্দোলনে নামে। বুধবার চতুর্থ দিনের মাথায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঢাকার পর চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সারা দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বুধবার বিকালে এ তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পাশাপাশি এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও।

এদিন যাত্রাবাড়ী শনির আখড়া এলাকায় উল্টোপথে আসা দ্রুতগতির একটি পিকআপ (মাঝারি ট্রাক) ফয়সাল নামে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। আহতাবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এদিকে নারায়ণগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে ৬ ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন। সেখানে রাস্তায় স্কুলছাত্রদের মারধর করার ঘটনাও ঘটেছে।

এ অবস্থার মধ্যেই সচিবালয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

পরে তিনি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। ঘাতক বাস জাবালে নূর পরিবহনের মালিক মো. শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এছাড়া ঘাতক বাসের চালক মাসুম বিল্লাহকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/আগস্ট ০২, ২০১৮)