দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ এবং ঘাতক চালকের ফাঁসিসহ ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবারও (৪ আগস্ট) রাজধানীসহ সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। মূলত ভাঙচুরের ভয়ে বাস মালিকরা সড়কে গাড়ি নামাতে ভয় পাচ্ছেন।

রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়লেও নিরাপত্তার কারণে সকালে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতি। বাস টার্মিনালগুলো থেকে আন্তনগর কিংবা দূরপাল্লার অধিকাংশ বাস ছেড়ে যায়নি। তবে বেশ কিছু বাস সকালে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ভাঙচুরের আশঙ্কায় পরিবহন নামানো হয়নি বলে দাবি পরিবহন মালিকদের। ফলে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন দূরপাল্লা ও রাজধানীর সাধারণ যাত্রীরা। শনিবার সকালে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদে এ চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে সকাল সোয়া ৯টা পর্যন্ত মিরপুর রোড, রোকেয়া সরণি, সাতমসজিদ রোড, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, মানিক মিয়া এভিনিউ, প্রগতি সরণি, এলিফ্যান্ট রোডে কোনো গণপরিবহন দেখা যায়নি।

সড়কে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস চলাচল করছে। সেগুলোও অনেক কম। বেশি ভাড়াও অনেক দুর্ভোগে অফিস ও গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।

শনিবার সকালে দোয়েল পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গুলজার হোসেন ভূইয়া গণমাধ্যমকে জানান, গত ২৯ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনে চারশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। এতে মালিকরা রাস্তায় গাড়ি নামাতে ভয় পাচ্ছেন। তারা গাড়ি চালানো নিরাপদ মনে করছেন না। তাই রাজাধানী ঢাকা ও ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ রয়েছে।

কল্যাণপুরে শাহজাহান নামে এক যাত্রী জানান, দেশ ট্রাভেলসে রাজশাহী যাবার জন্য কাউন্টারে এসেছিলাম। কিন্তু শুনলাম বাস চলাচল বন্ধ। সকাল ৭টার পর আর কোনো বাস চলছে না বলে জানিয়েছেন বাস কাউন্টার কর্তৃপক্ষ।

গাবতলীতে আমিনুর রহমান নামে এক যাত্রীজানান, দুদিন ধরে গ্রামের বাড়ি বগুড়া যাবো যাবো করে যেতে পারছি না। ট্রেনেও টিকিট মিলছে না। রাতে বাস চলাচলের খবরে আজ সকালে গাবতলীতে এসে দেখছি বাসই চলছে না।

এর আগে শুক্রবার মহাখালী বাস টার্মিনালে বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাংবাদিকদের বলেন, বাস মালিকরা রাস্তায় গাড়ি চালানো নিরাপদ মনে করছেন না বলেই তারা গাড়ি চালাননি।

তিনি বলেন, বাস মালিক বা শ্রমিক কাউকে গাড়ি বন্ধ করতে বলিনি। মালিকরাই নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাড়ি চালাচ্ছেন না। কোনো ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে বাস মালিকরাও একমত।

এদিকে সকাল থেকে হঠাৎ করেই বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার যাত্রী। অনেকেই বাস স্ট্যান্ডে এসে গন্তব্যে যেতে না পেরে ফিরে গেছেন। তবে মোটর শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাস চলা অব্যাহত থাকবে।

গত ২৯ জুলাই কর্মিটোলায় জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। প্রধানমন্ত্রী ২ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে নিয়ে এসে তাদের সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী নিহত দুই শিক্ষার্থীর প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র দেন।

বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। বুধবার চতুর্থ দিনের মাথায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঢাকার পর চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

বুধবার বিকালে এ তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পাশাপাশি এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও।

এদিন যাত্রাবাড়ী শনিরআখড়া এলাকায় উল্টোপথে আসা দ্রুতগতির একটি পিকআপ (মাঝারি ট্রাক) ফয়সাল নামে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। আহতাবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে ৬ ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন। সেখানে রাস্তায় শিক্ষার্থীদের মারধর করার ঘটনাও ঘটেছে।

এ অবস্থার মধ্যেই সচিবালয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

পরে তিনি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। ঘাতক বাস জাবালে নূর পরিবহনের মালিক মো. শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ ছাড়া ঘাতক বাসচালক মাসুম বিল্লাহকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/আগস্ট ০৪, ২০১৮)