আফসারের মৃত্যুতে বাংলাভাষা নিঃস্ব হলো
আফসারকে চিনতাম বছর ৩৫। চিনতাম কাছ থেকে। আমার বেলগাছিয়ার বসতবাটিতে কত থেকেছে। আমার মা, বাবা, দাদা সকলেই ওকে পছন্দ করত। ভালোবাসত। এক বিছানায় শুয়েছি অনুজ অগ্রজ। পরে এক সঙ্গে জমি কিনলাম। আমি আগে বাড়ি করলাম মহিষবাথানে। আফসার আর নাসিমা গেল সেই বাড়িতে থেকে ওদের বাড়ি তুলবে তাই। কিন্তু স্বজন নেই কাছে পিঠে কোথাও, থাকতে পারেনি ওরা। আর হয়তো ২০০২ এর গুজরাত নাসিমাকে মনে মনে আরো নিঃসঙ্গ করেছিল। ওরা চলে আসতে এবং ওদের জমি বিক্রি করে দিতে আমিও বাড়ি রাখিনি।
মহিষবাথানের বাড়ি নিয়ে আফসার বারোমাস পত্রিকায় একটি গল্প লিখেছিল। আত্মপক্ষ। আমিও আফসারের গল্পের বিপরীতে আমার গল্পটি পরের বছর লিখেছিলাম। আমার গল্প কিছুই হয়নি। আফসার খুব ভালো লিখেছিল। আমার বন্ধু আমার সহোদর আফসার আমেদ আজ চলে গেল। বাগনানের বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। কলকাতা ছেড়ে চলে গেল। বাংলাভাষা নিঃস্ব হলো। কতদিন কেটেছে একসঙ্গে। কত বছর ! জীবনানন্দের গল্প উপন্যাস ন্যাশানাল লাইব্রেরি থেকে অনুলিপি করে আনত আফসার। প্রতিক্ষণ তা প্রকাশ করত। আফসার আর আমি কেঁদুলি গেলাম। কেঁদুলি থেকে আমার চাকরির জায়গায় বড়জোড়া। তারপর কলকাতায় পাকাপাকি ফিরে আসা বড়জোড়া হয়ে। আমি বদলি হয়ে গিয়েছিলাম। আফসার আমাকে বাঁকুড়া থেকে কলকাতা ফিরিয়ে এনেছিল। প্রতিক্ষণে কত আড্ডা হয়েছে। আফসার কোনো পাকা চাকরি করেনি। পাকা হয়নি কেন জানতাম না। এইটি আমার কাছে বিস্ময় ! বিগত দিন দশ ভাইরাল জ্বরে ভুগে আজ একটু ভালো। বেরিয়েছিলাম। খবর পেলাম কলম পত্রিকা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে। আফসার আমাদেরও নিঃস্ব করে গেল। বাংলাভাষায় তুমি বেঁচে থাকবে তোমার গল্প তোমার উপন্যাস নিয়ে। বিদায় আফসার !
লেখক : খ্যাতিমান কথা সাহিত্যিক
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ০৫,২০১৮)