বসুন্ধরা আবাসিকে দিনভর সংঘর্ষ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) কাছে আজ সোমবার সকাল থেকে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলেছে।
এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘিরে ও আবাসিক এলাকার ভেতরে সোমবার দিনভর অন্তত ১২ বার পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পুলিশ এ সময় কয়েক শ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে, রাবার বুলেটও ছুড়েছে অনেক।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলছেন, দিনভর সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। রাত ৮টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও সাজোঁয়া যান এনে রাখা হয়।
বিকেলে আন্দোলনকারীরা যমুনা ফিউচার পার্কের পেছনের ফটকের কাছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ঢোকার মুখ থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তায় ও বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০ জনের মতো। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন ৪০ বা এর বেশি বয়সের কিছু ব্যক্তি। পুলিশ মাঝেমধ্যে গিয়ে সেখানে তাঁদের ধাওয়া দিলে এসব আন্দোলনকারী দৌড়ে বিভিন্ন গলিতে পালিয়ে যান। আবার পুলিশ চলে গেলে তাঁরা ফিরে আসছেন। হাতে লাঠি, রড এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। বিকেলে দুটি ক্যাম্পাসের ঢোকার গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিকেল চারটার দিকে পুলিশকে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীরা ইট ও পাথর ছুড়ে মারেন। পরে পুলিশ তাঁদের ওপর শতাধিক রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় রাবার বুলেটের আঘাতে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী এক শিশু ও ১৫ বছর বয়সী একটি কিশোর আহত হয়। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরা কেউ এখানকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র নয়। বসুন্ধরার পাশের বস্তিতে থাকে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে আন্দোলন জোরদার করতে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সটি ও আইইউবির কিছু শিক্ষার্থী রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্টের ক্যাম্পাসে যান। সেখানে পুলিশের ধাওয়ার মুখে এসব শিক্ষার্থী আবার বসুন্ধরার ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। তারপর থেকে বসুন্ধরা এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা। বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ এসব শিক্ষার্থীকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। তবে তাঁরা এলাকা ছেড়ে যেতে রাজি হননি। এরপর পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সটি ও আইইউবির নিরাপত্তা বিভাগের কয়েকজন কর্মী জানান, নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনে প্রথম তিন দিন এখানে কেউ অবস্থান নেয়নি। গত বৃহস্পতিবারই স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখান থেকে চলে যায়। তিন দিন ধরে এই এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
সোমবার দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, বসুন্ধরার ফটকে আজ পুলিশ যে শিক্ষার্থীর কাছে আইডি কার্ড পেয়েছে, তাঁকেই পিটিয়েছে বা ধরে নিয়ে গেছে।
পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তিন দিন ধরে একনাগাড়ে এই এলাকায় এসব লোক রয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে এখানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা আশ্রয় নিয়েছে। পুরো এলাকা মানুষের বাসযোগ্য করে তোলার জন্যই আমরা কাজ করছি।’
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, দেশের একটি বৃহৎ হাসপাতাল এখানে। এ ছাড়া এই এলাকায় কূটনীতিকদেরও বসবাস। এখানে আসা রোগীদের অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত ধরে ধরে এরা চেক করছে। এই প্রতিবেদকও দেখেন, অ্যাপোলো হাসপাতালমুখী অনেক গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স আটকে সেসব চেক করে এসব আন্দোলনকারী। এ জন্য গাড়ির দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়।
আজ এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেখানে আসা গণমাধ্যমকর্মীরা পুলিশ ও আন্দোলনকারী দুপক্ষের কাছেই হেনস্তার শিকার হন।
আন্দোলনকারীরা রাস্তার বিভাজকগুলো উপড়ে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন। এর ফলে এই এলাকায় যানবাহন চলতে পারছে না ঠিকমতো।
এখন কার্যত চারদিক দিয়ে আন্দোলনকারীদের ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় আহতদের সন্ধানে অ্যাপোলো হাসপাতালে গেলে সেখানে কর্তব্যরত এক কর্মকর্তা বলেন, আহত মানুষের সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। কাল সকালে নিশ্চিত করে বলা যাবে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/আগস্ট ০৬, ২০১৮)