চুক্তিতে বাস চলাচল বন্ধ হয়নি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ঢাকায় চুক্তিতে বাস না চালানোর ঘোষণা মালিকরা দিলেও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রথম দিন দেখা যায়নি।
এই সিদ্ধান্ত না মানায় পাঁচটি পরিবহন কোম্পানির সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছে মালিকদের সংগঠন ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি।
সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার চেষ্টায় বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজধানীতে আর চালকদের সঙ্গে দৈনিক চুক্তি বা জমার ভিত্তিতে বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত বুধবার নিয়েছিল মালিকপক্ষ।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছিলেন, চালকরা বাস চালিয়ে সারাদিনের আয় মালিকের হাতে তুলে দেবেন। আর মালিক তার বাসের চালক-শ্রমিকদের নির্ধারিত হারে মজুরি দেবেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটের বলাকা পরিবহনের এক চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা আগের মতোই মালিকের সঙ্গে চুক্তিতেই চালাচ্ছেন বাস।
দৈনিক ৩ হাজার টাকায় মালিকের সঙ্গে চুক্তি করেছেন বলে জানান ওই বাসের চালক মানিক।
তিনি বলেন, নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানেন না তারা।
‘মালিক তো আইজকাও আমাগোরে টার্গেট দিয়া দিছে। সারাদিনে তারে তিন হাজার টাকা দিমু। খরচ-টরচ বাদে বাকি টেকা আমাগো দুইজনের (চালক-সহকারী)।’
সদরঘাট গাজীপুরা রুটের সুপ্রভাত পরিবহনের অনেক বাসকেও একইভাবে চলতে দেখা যায়।
একটি গাড়ির চালক রাজন জানান, দৈনিক সাড়ে তিন হাজার টাকা চুক্তিতে বাস চালান তিনি।
আমাগো এই রুটের বেশিরভাগ বাস টার্গেটে চলে। এখন নতুন নিয়মের কথা জানি না। মালিক তো টার্গেটেই গাড়ি দিল।
তুরাগ পরিবহনের বাসও চুক্তিতে চালাতে দেখা গেছে। ঢাকা মেট্রো ব-১৪-১৯৪৪ নম্বর বাসের চালক হালিম বলেন, তুরাগ পরিবহনের সব বাস এভাবেই চলে।
ডেইলি দুই হাজার টাকা জমায় গাড়ি চালাই। আইজও এই নিয়ম। নতুন নিয়ম হইলে তো সেইভাবেই চলত।
তবে সুপ্রভাত পরিবহনের কিছু বাস ‘ওয়ে বিল’ হিসেবে চলাচল করে বলে জানান এই কোম্পানির ঢাকা মেট্রো ব-১২-৪৫৮ নম্বর বাসের চালক মনিরুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আমার গাড়ি ওয়েবিলে চলে। সারাদিনের জমা থেকে কোম্পানি আমাগো বেতন দেয়। তবে কিছু গাড়ি টার্গেটেও চালায়।’
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে সাইনবোর্ড রুটের অনাবিল পরিবহনের বাসও চুক্তিতে চলাচল করেছে।
ওই পরিবহনের একটি বাসের চালক স্বপন জানান, তিনি মালিককে দৈনিক ৯ হাজার টাকা জমা দেন।
‘গাড়ির তেল-মবিল, রোড খরচ সব মালিক দেয়। মালিকরে নয় হাজার টাকা দেওয়া লাগে। হেরপরে যা থাকে, হেইডা আমাদের।’
সমিতির ঘোষণা বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে জানতে চাইলে মালিক সমিতির নেতা এনায়েত উল্লাহ বলেন, নিয়ম ভেঙে চুক্তিতে বাস চালানোয় পাঁচটি পরিবহন কোম্পানির সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।
আজমেরী, ডিএনকে, স্কাইলাইন, সুপ্রভাত ও গাবতলী-সদরঘাট পরিবহন লিমিটেডের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। সমিতির সদস্যপদ হারালেও এসব পরিবহনের বাসের নিবন্ধন বাতিল হবে না।
এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ওইসব পরিবহন মালিকদের মেম্বারশিপ বাতিল করেছি। তারা আর সমিতির নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না। আমরা কাউকেই ছাড়ব না। যারা নিয়ম মানবে না, তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘চুক্তিতে বাস চালানো বন্ধ করে ছাড়ব,’ বলেন তিনি।
এনায়েত উল্লাহ জানান, কোনো পরিবহনের বাস চুক্তিতে চলছে কি না, তা নজরদারি করতে মালিক সমিতির চারটি দল কাজ করবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী, ফুলবাড়িয়া এবং মিরপুরকেন্দ্রিক এসব দল করা হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/আগস্ট ১০, ২০১৮)