শহিদুলকে নিয়ে জয়ের বক্তব্য অমানবিক: রিজভী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেইসবুকে দেওয়া বক্তব্য অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, “আমরা মনে করি, সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের ওপর অকথ্য পুলিশি নির্যাতনকে উৎসাহিত করা। তার এই বক্তব্য খুবই অমানবিক।”
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘উস্কানিমূলক অপপ্রচারের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে আছেন দৃক গ্যালারি ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে বলে শহিদুল ইতোমধ্যে অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে; দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীরা তাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বানও জানিয়ে আসছেন। শহিদুল আলমকে নিয়ে এসব আলোচনার মধ্যে শুক্রবার নিজের ফেইসবুক পাতায় স্ট্যাটাস দেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
সেখানে লিখেছেন, “শুধুমাত্র সফল ও জনপ্রিয় হওয়ার জন্যই কি আজ শহিদুল আলমকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখার কথা বলা হচ্ছে? তাহলে কি আমিসহ সকল সফল ও জনপ্রিয় মানুষই আইনের ঊর্ধ্বে?”
জয়ের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “কাটছাঁটের পরেও বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও বন্দি অবস্থায় শারীরিক নির্যাতন না করার যে বিধান আছে সেটিকে অগ্রাহ্য করলেন তিনি। পুলিশ হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনের পক্ষে কথা বলে সংবিধান ও উচ্চ আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করলেন জয় সাহেব। উচ্চ আদালতেও এই ব্যাপারে নির্দেশনা আছে।”
প্রশ্ন রেখে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, “একদিকে শহীদুল আলমের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্রীদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিক লীগের সশস্ত্র হামলার দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে হামলায় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন সাংবাদিকরা।
“এখনো কেন সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী চিহ্নিত ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিক লীগের সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার হল না তার জবাব কি সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেব দেবেন? শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর চিহ্নিত হামলাকারীরা আইনের ঊর্ধ্বে না নিচে বাস করেন তা জানাবেন কি তিনি?”
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই ধারা প্রয়োগ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। লেখক, বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট, রাইটস গ্রুপ, মুক্ত চিন্তার মানুষের মাথার উপরে ৫৭ ধারার তরবারি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
“এই কালো আইনের ৫৭ ধারার নির্মম প্রয়োগে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে। নির্দয় উৎপীড়নের রক্তে ভিজে গেছে তার পরিধেয় বস্ত্র। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা দেশবাসীকে জানাবেন কি কতটুকু আইনের ঊর্ধ্বে উঠলে একজন খ্যাতিমান মানুষ পুলিশি শারীরিক নির্যাতন থেকে রেহাই পান বা পান না?”
পরিবহনের নৈরাজ্য এখনো যায়নি দাবি করে রিজভী বলেন, “আন্দোলন দমানোর নামে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন বেপরোয়া চালকদের আরও বেশি বেপরোয়া করেছে। সড়কে নৈরাজ্য ও ভোগান্তি আরও বেড়েছে। কারণ পরিবহন সেক্টারে হঠকারী ও অবমৃশ্যকারিতার জনক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। এখনো নির্লজ্জ দাপট তিনি দেখিয়ে যাচ্ছেন।
“সড়কে নৈরাজ্যের জন্য দায়ী সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। টাকার বিনিময় লাইসেন্স দেওয়া, আনফিট গাড়িকে ছাড়পত্র দেওয়া, রাস্তাঘাটের ভয়াবহ দুদর্শা, রাস্তা মেরামতে লুটপাটের কাজ না হওয়া ইত্যাদি সর্বব্যাপী দুর্নীতির জন্য দায়ী সেতু মন্ত্রণালয় ও সরকার। সড়কের অবস্থাপনার জন্যে ঈদে ঘরমুখো মানুষ ছুটছে ট্রেনে। সেতুমন্ত্রী যদি সফলই হতেন তাহলে মানুষ ট্রেনের দিকে ঝুঁকছে কেন? সড়ক ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ মন্ত্রীর নাম ওবায়দুল কাদের। পরিবহন সেক্টারের সকল দুষ্কর্মকে বৈধতা দানের ফেরিওয়ালা হচ্ছেন তিনি।”
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকারকে ‘স্বচ্ছ মন’ নিয়ে আলোচনা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বিএনপির সুনির্দিষ্ট দাবি আছে। সেসব দাবিকে তো বিবেচনায় নিতে হবে। এমনি শূন্য হাতে শূন্য টেবিলে আলোচনা হয় না। বিরোধী দল আমরা যে, নীতির উপর, আমরা যে দাবির উপর আন্দোলন করছি নিশ্চয়ই সেটা আলোচনায় আসতে হবে। আমরা স্বচ্ছ মন নিয়ে আলোচনা চাই।” খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ১২,২০১৮)