দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : শনিবার বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের প্রথম বার্ষিকী হলেও তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় প্রকৃতপক্ষে কোন অগ্রগতি নেই। মিয়ানমারের সাথে শুধুমাত্র আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে রাখাইন রাজ্যে উপযোগী পরিবেশ না থাকায় রোহিঙ্গারা এখনো বাংলাদেশে আসছে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ‘এখন পর্যন্ত, একমাত্র অগ্রগতি হচ্ছে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা বন্ধ হয়নি। দুর্ভাগ্যবশত রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিবেশের অভাবে রোহিঙ্গারা এখনো বাংলাদেশে আসছে।’

সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করেন। রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারের ফেরানোর সময়সীমা বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা দাবি করে বলেন‘এটি সত্যি নয় যে বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে’ উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রতি সপ্তাহে এখনো রোহিঙ্গাদের ছোট ছোট দল বাংলাদেশে আসছে। শনিাবর ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর দমন অভিযানের প্রথম বার্ষিকী। অথচ উল্টো প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার বলছে, পুলিশ স্টেশনে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) আক্রমণ করেছে।

সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে, গ্রামের অসংখ্য ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে, ব্যাপক যৌন সহিংসতা চালিয়েছে। ফলে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।

অন্যদিকে আরেক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ সীমান্ত এখনো খোলা রয়েছে যা নজিরবিহীন এবং মানবিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ উদারতা দেখাচ্ছে।

গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে এক বক্তব্যে মিয়ানমার নেত্রী সু চি বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের রাখাইন রাজ্যে ফেরানোর বিষয়ে সময়সীমা বেঁধে দেয়া কঠিন। কারণ এ বিষয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেয়া দেশ বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রয়োজন মিয়ানমারের।

তিনি বলেন, ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে মিয়ানমার। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করছে।

রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম দমন অভিযানের কারণে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালানোর ঘটনায় মিয়ানমার সরকারের পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়ে সু চি বলেন, সন্ত্রাসবাদের কারণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সামাজিক বৈষম্যের কারণে নয়।

গত ১১ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে করে ওই রাজ্যে চালানো ‘ব্যাপক বিধ্বংসী অবস্থা' পর্যবেক্ষণ করেছেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়িগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখেছেন। অথচ মিয়ানমার সরকার ওইসব ঘরবাড়িতে ‘দুর্ঘটনাজনিত আগুন' লেগেছে বলে বর্ণনা করছে।

রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের অগ্রগতি সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক জানান, রোহিঙ্গারা রাখাইনে তাদের নিজ বাড়িতে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে ফিরে যাবে বলে তিনি আশাবাদি।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ২৫,২০১৮)