ফিরে এলেন 'দরিদ্র মা'
কুমিল্লা প্রতিনিধি : হাসপাতালের চিকিৎসা বিল দেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন এক দরিদ্র বাবা-মা। ৯ দিন বাদে বুধবার দুপুরে শিশুটির মাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ওই শিশুটির নাম দিয়েছেন পুলিশ সুপার 'দৃষ্টান্ত'। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে শিশুটির চিকিৎসার সব ব্যয় বহনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুমিল্লার ঝাউতলায় মা ও শিশু হাসপাতালে ভূমিষ্ঠ ২৬ সপ্তাহ বয়সী এক অপরিপক্ক সন্তানকে বাঁচানোর জন্য ভর্তি করেন শাহ আলম ও রোকেয়া বেগম। ছয় দিনে প্রায় এক লাখ টাকার বিল দেখে তারা সন্তানকে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হলে বাবা-মার সন্ধানে নামে পুলিশ।
রোকেয়া বেগম বলেন, তার স্বামী দিনমজুর। ২০০৭ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান হলেও বাঁচেনি। প্রথম সন্তানটি জন্মের তিন দিন পরই মারা যায়। দ্বিতীয় সন্তানটি জন্মের ১০ দিন পর মারা যায়। এবার তৃতীয় সন্তানটি সাত মাসে জন্ম নেয়। শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য তাই এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে ছয় দিনে চিকিৎসার বিল এক লাখ টাকার মতো হয়। বিল দেখে তারা স্বামী-স্ত্রী চিন্তায় পড়ে যান। অর্থাভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না বলে বাচ্চাটিকে রেখেই পালিয়ে যান।
তিনি বলেন, 'সন্তানটি বাঁচবে- তা ভাবতেই পারিনি। তাকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় আমি ও আমার স্বামী পুরোটা রাস্তায় কান্না করেছিলাম। আল্লাহ আমার সন্তানকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং সবার সহযোগিতায় আমি আমার সন্তানটি ফিরে পেয়েছি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।'
হাসপাতালের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউল আলম চৌধুরী এবং এর দায়িত্বরত চিকিৎসক তানজিদা চৌধুরী সম্পা জানান, ১৮ আগস্ট হাসপাতালে এসেছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের এই দম্পতি। কিন্তু ২৪ আগস্ট বিকেল বেলা থেকে এই দু'জনের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। তবুও বাচ্চাটির চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হয়। এ বিষয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ জানানোর পর বুধবার শিশুটির মা হাসপাতালে আসেন। তবে শিশুটির বাবা আসেননি।
শিশুটির চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের ঘোষণা দেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ও জেলা সিভিল সার্জন ডা.মুজিবুর রহমান।
জেলা প্রশাসক জানান, গণমাধ্যম থেকে বিষয়টি জানার পর জেলা পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। তারপর পুলিশ ওই দম্পতির ঠিকানা খুঁজে বের করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুটির চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, 'ঘটনাটি আমাদের খুব নাড়া দেয়। কুমিল্লা পুলিশের কর্মকর্তারা এ শিশুটির চিকিৎসার জন্য একটি তহবিল গঠন করেছেন। শিশুটির চিকিৎসার জন্য এ দম্পতিকে আর ভাবতে হবে না।'
জেলা সিভিল সার্জন জানান, এমন অপরিপক্ক শিশুর চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন- সর্বনিম্ন ব্যয়ে চিকিৎসা দেবেন শিশুটিকে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকেও সব সহযোগিতা করা হবে।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/সেপ্টেম্বর ০৫,২০১৮)