দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজধানীর দক্ষিণখানে দুই কিশোর গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে খুন হতে হয় মেহেদী হাসানকে (১৭)। এমন তথ্য জানিয়ে পুলিশ বলছে, অন্য গ্রুপের এক সদস্যকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করার ‘অপরাধে’ তাকে ছুরি চালিয়ে হত্যা করে প্রতিদ্বন্দ্বি গ্রুপ।

শান্ত এবং আরাফাত এই দুই কিশোরের নামে পরিচালিত গ্রুপ দুটি দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে সক্রিয়। তাদের মধ্যে ‘সিনিয়র’ আর ‘জুনিয়র’ গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিল। এই দ্বন্দের বলি হতে হয়েছে মেহেদীকে।

এরই মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে সিলেট এবং দিনাজপুর থেকে ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

তারা হলেন; সাইফ, মনির, আরাফাত, সাইফুল, মেহেরাব, আপেল, সিফাত ও সোহেল। তাদের কাছ থেকে একটি সুইচ গিয়ার চাকুও উদ্ধার করা হয়।

গত ৩১ অগাস্ট ছুরিকাঘাতের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মেহেদীর। ঘটনার পরদিন তার বাবা দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা করেন।

এই ঘটনায় জড়িতদের আটক করতে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও ছায়া তদন্ত করছিল।

পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, দক্ষিণখানের চেয়ারম্যান বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নগরিয়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, বড়-ছোট দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিশোর শান্ত ও আরাফাত গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই হাতাহাতি ও মারামারি হতো।

এর জেরেই শান্ত গ্রুপের সদস্য মেহেদীকে হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে বলে গ্রেপ্তারদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

তিনি বলেন, ঘটনার শুরু বেশ কিছুদিন আগে। আরাফাত গ্রুপের কাউসার নামের এক সদস্য মেহেদীকে ‘তুই’ সম্বোধন করে। এর জের ধরে শান্ত গ্রুপের ছেলেরা কাউসারকে মারধর করে।

‘এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৮ আগস্ট আবারো শান্ত গ্রুপের সদস্যরা আরাফাত গ্রুপের সদস্য সাইফকে মারধর করে। এরপরই শান্ত গ্রুপের মেহেদীর ওপর হামলার পরিকল্পনা করে আরাফাত গ্রুপ।’

ডিসি মিডিয়া জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩১ আগস্ট স্থানীয় সংসদ সদস্যের কর্মসূচিতে মিছিল নিয়ে আসার পর মেহেদীর ওপর হামলা চালায় আরাফাত গ্রুপের সদস্যরা।

পরে গুরুতর আহত অবস্থায় মেহেদীকে প্রথমে কেসি হাসপাতাল ও পরবর্তীতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মাসুদুর রহমান জানান, এ এলাকায় উঠতি বয়সী ছেলেরা বেশ কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত। গ্রুপগুলো হলো- ‘জিম-জিয়াদ গ্রুপ’, ‘শান্ত গ্রুপ’, ‘আরাফাত গ্রুপ’, ‘কামাল গ্রুপ’, এবং ‘আনছার গ্রুপ’। এরাই এলাকায় চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ছিনতাই, হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের অপরাধে সঙ্গে জড়িত।

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, মেহেদীকে হত্যার পর খুনিরা ঢাকার বাইরে পালানোর চেষ্টা করেছিল। তাদেরকে পালিয়ে যেতে অভিভাবকরাও সহযোগিতা করেছেন। এজন্য তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

এই হত্যায় আরো কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/সেপ্টেম্বর ০৯,২০১৮০