শুনানি চলছে, খালেদার সাক্ষাৎ চান আইনজীবীরা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলার আদালত কারাগার চত্বরে স্থাপনের পর তৃতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) শুনানি হচ্ছে। শুনানির শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে একটি আবেদন দাখিল করেছেন।
আবেদনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করার অনুমতি চেয়েছেন তার দুই আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া।
এতে বুধবারের (১২ সেপ্টেম্বর) শুনানির দ্বিতীয় দিনে কারাগার থেকে আদালতের কাছে পাঠানো চিঠি সম্পর্কে জানতে এবং তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতে এটির শুনানি হবে।
এর পাশাপাশি কারাগারে আটক খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলা চলতে পারে কি না, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবেন তার আইনজীবীরা। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারেও শুনানি হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আদালতের কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে বরাবরের মতো ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের কড়া তল্লাশির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সকাল পৌনে ১১টার দিকে ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামান এজলাসে প্রবেশ করেন। এর কিছু সময় পরেই সেখানে আসেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। সাংবাদিকরাও মোবাইল রেখে আদালতে প্রবেশ করেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামি হলেন—খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়।
গত ৪ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে মামলার কার্যক্রম খালেদা জিয়া যেখানে বন্দি আছেন, সেই কারাগার চত্বরে আদালত বসানোর তথ্য জানানো হয়। পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর মামলার কার্যক্রমে আইনজীবীরা না গেলেও খালেদা জিয়া হুইলচেয়ারে করে আদালতে আসেন।
এ সময় খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, ‘জজ সাহেবের কাছে কোনো কথা বা নিবেদন করা যায় না। উনি তারিখ দিয়ে উঠে চলে যান। আমাদের কারো কথা শুনেন না। সরকারের হুকুমে এবং নির্দেশে তিনি সব কিছু পরিচালনা করছেন। আমার পায়ে ব্যথা। ডাক্তার আমাকে পা সব সময় উঁচু করে রাখতে বলেছেন। হাতেও প্রচণ্ড ব্যথা। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে। আমি খুবই অসুস্থ। আমি ঘন ঘন কোনো হাজিরা দিতে পারব না। রায় তো লেখাই আছে। আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের যা ইচ্ছা রায় দেন, যত খুশি সাজা দিয়ে দেন।’
গতকাল ছিল কারাগার চত্বরে বসানো আদালতে মামলার কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিন। দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রমে উপস্থিত হননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বিশেষ এই আদালতের বিচারককে চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি আদালতে আর আসবেন না।
বুধবার দ্বিতীয় দিন, আদালত মুলতবির আগে বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমার কাছে একটি চিঠি এসেছে। এতে খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি আর আদালতে আসবেন না।’ এ অবস্থায় প্রধান আসামির অনুপস্থিতিতে জামিনের শুনানি কীভাবে হবে এবং মামলার কার্যক্রম চলতে পারে কি না, সে ব্যাপারে আইনগত ব্যাখ্যা হাজির করার জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন আদালত।
জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘খালেদা জিয়া যেহেতু কারাগারে আছেন আর আদালত কারাগারের ভেতরে, তাহলে দুটোই থাকছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সে কারণে উনি কেন আসতে পারেননি, কী বলেছেন সেটা আমরা এখনও নিশ্চিত না। আবার উনি যেহেতু আগের দিন বলেছেন অনেক বেশি অসুস্থ, উনার শারীরিক অবস্থা এখন কী, সেটাও তাঁর সঙ্গে দেখা করা ছাড়া বলা সম্ভব না।’
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮)