হতাশার ডানা মেলে ওড়ে রাতের হুতোম
মাসুম মুনাওয়ার
চৈত্রের প্রলাপ
১.
চৈত্রে দেখা গেলেও প্রকাণ্ড মেঘ
বৃষ্টি আসে না ফুল
বৃষ্টি ঝরে যায় বোশেখের রোদে
হুটহাট মিষ্টি বকুল।
২.
মনে পড়ে গেলে তোমারই ঠোঁট
দোষ কি আমার তাতে
খিদে পেলে কেন চুমু খেতে চাই
শাদা দুধে-ভাতে!
ঝগড়ার কবিতা
আমার কবিতাগুলো ইদানিং পিচঢালা পথ হয়ে যায়।
পথ বৃষ্টিতে ভিজে খানাখন্দে জমায় শীতল পানি।
এক আধখানা কবিতা কংক্রিটে পড়ে ভাঙে হাত-পা।
বাকি কবিতাগুলো নিয়ে গেলে হসপিটালে ঝগড়া বাঁধায়।
কাঁঠালগাছ ও প্রেমতত্ত্ব
কুয়াশা বিক্রি দিয়ে একটা সকাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা করে
কোনো একটা কাঁঠালগাছ সূর্য বন্ধক রেখে তাস খেলতে বসে জায়নামাজে
প্রবহমান স্রোতধারা ঋণ নিয়ে প্রেমতত্ত্ব দেয় একটি শালিখ
সকাল, কাঁঠালগাছ আর শালিখেরা যমুনার চরে ঘর বাঁধে
কাঁঠালগাছ ও প্রেমতত্ত্ব নিয়ে যে মাঝি কথা বলেছিলো সে আজ নিরুদ্দেশ।
কাঙাল
গোলাপ ভালোবাসি
ফুল আমাকে ভয় পায়
নারী ভালোবাসি
নারী ভয় পায়
আমি মানুষ ভালোবাসি
মানুষ ভয় পায়
ব্যক্তি ভালোবাসি
ব্যক্তি আঁৎকে ওঠে
প্রেমের দোকানগুলো গুছিয়ে প্রভু তোমাকেই ভালোবাসি
প্রভু ভয় পায়
আমি ভালোবাসার পাত্র থেকে ভালোবাসা ছুঁড়ে ফেলে পাত্র ভালোবাসি
পাত্রে কিছুদিন পর ময়লা তৈরি হয়
আমি ময়লাযুক্ত পাত্র ছুঁড়ে ফেলি
পাত্র ভেঙে খানখান
আমি প্রেম ছুঁড়ে ফেলার ভয়ে অবশেষে নিজেকেই ছুঁড়ে ফেলি
আমি নিঃস্ব হয়ে ঘুরি আকাশের প্রান্তে নতুন কোনো প্রভুর খোঁজে।
জোছনার আসর
হতাশার ডানা মেলে ওড়ে রাতের হুতোম
গাছে গাছে রোদন জুড়ে বনের মালি
দূরের নদী থেকে আওয়াজ আসে
.................................ইয়া জালাল, ইয়া ইয়ামেনি।
শহুরে রাস্তাগুলো তোমার ইশারায় গড়িয়ে চলে
আশি কিলো বেগে যে আলো পথ দেখায়
তার উল্টো থেকে কেউ আঁধার খোঁজে।
কোনো একটা পাগল
জোছনার ঘুম থেকে জেগে নিরালা বনে
জোনাকির আলো খোঁজে নিরুদ্দেশ।
স্পষ্টত দুঃখগুলো সঙ্গী হলে
কাদামাটি লেপ্টে থাকে অঙ্গে।
যে কামুক শরীরের লোভে ক্ষয়ে যায়,
গোলাপের পাপড়িতে তার হাত ধরে নামে জলবসন্ত।
পুতুলের জীবন নিয়ে ব্যবসা জমিয়ে তোলে
..........................গুটিকয়েক অনাচার।
আর হতাশার ডানা গুছিয়ে
অশ্বথের শিকড়ে জমে জোছনার আসর
দলে দলে জোনাকি মেতে ওঠে ইয়া জালাল, ইয়া ইয়ামেনি,
.............................ইয়া জালাল, ইয়া ইয়ামেনি...
[পরিচিতি : মাসুম মুনাওয়ারের জন্ম গ্রামে। ১ মার্চ ১৯৮৮, ১৭ ফাল্গুন ১৩৯৪, রাম জীবনপুর, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনায়। মূলত তিনি কবিতা ও গল্প নিয়েই কাজ করেন। সাহিত্যের অন্য শাখাতেও আগ্রহ রয়েছে। তাই লেখেন ছড়া, প্রবন্ধ ও ফিচার। সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা ও সাহিত্য সংগঠনের সাথে নিবিড় সর্ম্পক তার। ২০০৯ সালে মাধ্যমিকে পড়ার সময় মাসুমের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘মহিরুহ’।
২০১১ সালে থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে সম্পাদনা করেছেন সাহিত্য পত্রিকা ‘চিরকুট’, একাডেমিক পত্রিকা ‘পরিবর্ত’, সাংস্কৃতিক জোটের মুখপত্র ‘উচ্চারণ’। এছাড়া বিতর্ক সংগঠন জুডোর স্যুভেনির সম্পাদনার সাথেও যুক্ত ছিলেন। তার প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ দুটি। ‘সূর্যকুসুম’ ও ‘জলবন’। প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ ‘সূর্যোদয়ের দৃশ্যাবলি’। ২০১৪ সাল থেকে চিরকুটকে একটি সাহিত্য সংগঠনে রূপ দেন তিনি। চিরকুট একই সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সাহিত্য সংগঠন ও অন্যতম ছোটকাগজ। মাসুম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর।]