দমবন্ধ করা জয় বাংলাদেশের
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : জয়ের জন্য আফগানদের দরকার ১ বলে ৪ রান। কিন্তু প্রতিপক্ষ যে বাংলাদেশের মুস্তাফিজ। ঠান্ডা মাথায় বল করলেন। বাটসম্যানকে ফাঁকি দিয়ে বল গেলো মুশফিকের হাতে। তালু বন্দী করে জয়ের উল্লাসে মেতে উঠলেন মুশফিক। মেতে উঠলো গোটা বাংলাদেশ। এভাবে এশিয়া কাপে আজ আফগানিস্তানকে ৩ রানে নাটকীয়ভাবে হারিয়েছে বাংলাদেশ। হেরে গেলে এশিয়া কাপ থেকে এক রকম ছিটকে যেতে হতো। এমন ম্যাচে শেষ ওভারে আফগানদের প্রয়োজন মাত্র ৮ রান । মোস্তাফিজের করা সেই ওভারে আফগানিস্তান নিতে পেরেছে মাত্র ৪ রান।
শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ও দুর্ভাগ্যের শিকারে ৮৭ রান তুলতে বাংলাদেশ হারায় ৫ উইকেট। সেখান শুরু মাহমুদউল্লাহ-ইমরুলের প্রতিরোধ। ষষ্ঠ উইকেটে তারা যোগ করেন গুরুত্বপূর্ণ ১২৮ রানের জুটি। তাতেই বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৪৯ রান পর্যন্ত যায়।আফগানিস্তানের বিপক্ষে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করেছে ২৪৯ রান। সে রান তাড়া করে আফগানস্তান ৭ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে করেছে ২৪৬রান।
চমৎকার ব্যাটিংয়ে মাহমুদউল্লাহ খেলেন দলীয় সর্বোচ্চ ৭৪ রানের ইনিংস। আর খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে দেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে উড়ে যাওয়া ইমরুলকে তো আউটই করতে পারেননি আফগান বোলাররা। ৮৯ বলে হার না মানা ৭২ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি, যাতে ছিল ৬টি বাউন্ডারির মার।
সাকিব ও মুশফিকের দুঃখজনক রান আউটের পর দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ। ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে পূরণ করেন হাফসেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পথেও হাঁটছিলেন তিনি। কিন্তু হলো না। থামতে হয় তাকে ৭৪ রানে।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২০তম হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশের ইনিংসের জন্য তার এই ব্যাটিং ছিল চরম পাওয়া। অসাধারণ দক্ষতায় দলকে এগিয়ে নিয়ে আফতাব আলমের বলে থামেন তিনি। রশিদ খানের হাতে ধরা পড়ার আগে ৮১ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি ৩ চার ও ২ ছক্কায়।
মাহমুদউল্লাহর পর ইমরুলের হাফসেঞ্চুরি
বিপর্যয়ের মাঝে চমৎকার এক ইনিংস খেললেন মাহমুদউল্লাহ। ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেছেন তিনি। তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২০তম হাফসেঞ্চুরির পর ফিফটির দেখা পেয়েছেন ইমরুল কায়েসও।
বড় কঠিন সময় ক্রিজে এসেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন এলোমেলো। মাঠে নেমে বিপর্যয় কাটানোর মিশন শুরু করলেন তিনি। একটু একটু করে নিজের রানের সঙ্গে বাড়িয়ে নেন দলীয় সংগ্রহ। শেষ পর্যন্ত ৫৯ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২০তম হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি।
দুই রান আউটে এলোমেলো বাংলাদেশ
গুছিয়ে ওঠা বাংলাদেশ আবার এলোমেলো। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের রান আউটে চাপে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এই দুই রান আউটের আগে লিটন দাস ফিরে যাওয়ায় টাইগাররা হারায় ৫ উইকেট।
শুরুর ধাক্কার পর মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস বেশ গুছিয়ে নিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু রশিদ খান বোলিংয়ে আসতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। আগের বলে আফগান স্পিনারকে চার মেরে পরের বলটাতেই আবার ‘বিগ’ শট খেলতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু ব্যাটের উপরের দিকে লেগে বল ভাসতে থাকে বাতাসে। সহজ ক্যাচটা নিতে কোনও অসুবিধাই হয়নি ইহসানউল্লাহর। যাওয়ার আগে ৪৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে লিটন করেন ৪১ রান।
লিটনের আউটের দুই বল পরই আবার ধাক্কা বাংলাদেশ শিবিরে। দুঃখজনক রান আউটে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান সাকিব আল হাসান। মুশফিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে সামিউল্লাহ শেনওয়ারির সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে গেলে শূন্য রানে ফেরেন সাকিব।
মুশফিকও একই ভুলের শিকার! চমৎকার ব্যাটিংয়ে আরও একটি বড় ইনিংসের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানও শিকার রান আউটের। ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে মোহাম্মদ নবীর দেওয়া থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে দেন বোলার রশিদ। তাতে ৩৩ রানে থামে মুশফিকের ইনিংস।
শুরুর ধাক্কায় ২ উইকেট নেই বাংলাদেশের
আবারও ব্যর্থ নাজমুল হোসেন শান্ত। ওপেনিংয়ের সুযোগটা একেবারেই কাজে লাগাতে পারলেন না তিনি। আগের দুই ম্যাচের মতো শুরুতেই ফিরে গেছেন এই ব্যাটসম্যান। তার আউটের পরপরই মোহাম্মদ মিঠুন প্যাভিলিয়নে ফিরলে বাংলাদেশের নেই ২ উইকেট।
তামিম ইকবালের চোটে একাদশে জায়গা পেয়ে ওপেনিংয়ে নামার সুযোগ হয় শান্তর। কিন্তু তিন ম্যাচের একটিতেও কিছু করতে পারলেন না তিনি। ওপেনিং সমস্যার পরও তার ওপর আস্থা রেখেছিলেন টিম ম্যানেজমেন্ট। অথচ আফতাব আহমেদের বলে বিগ শট খেলতে গিয়ে মাত্র ৬ রানে শেষ হয়ে যায় তার ইনিংস।
শুরুর ওই ধাক্কা কাটিয়ে উঠবে কী বাংলাদেশ, উল্টো চাপ আরও বেশি করে তৈরি হয় মিঠুনের বিদায়ে। মুজিব উর রহমানের বলে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান তিনি। আউট হওয়ার আগে নামের পাশে যোগ করতে পারেন মাত্র ১ রান।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ইমরুল-নাজমুল
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। আবুধাবিতে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের এই ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
নানামুখী চাপে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ এই ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে দিতে পারলেই কেবল জয় সম্ভব। যদিও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ আফগানদের বিপক্ষে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আগের দুই ম্যাচের ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে টিম ম্যানেজমেন্ট দুই ওপেনারকে যোগ করেছে স্কোয়াডে। শনিবার রাতে দলের সঙ্গে যোগ দিলেও আফগানদের বিপক্ষে মাঠে নেমেছেন ইমরুল কায়েস।
মোসাদ্দেক হোসেনের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন ইমরুল। পরিবর্তন আছে আরেকটি, পেসার রুবেল হোসেনের জায়গায় ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে স্পিনার নাজমুল ইসলামের।
বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, মোহাম্মদ মিঠুন, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল ইসলাম।
আফগানিস্তান একাদশ: মোহাম্মদ শাহজাদ, ইহসানউল্লাহ, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাহ শহীদি, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, আসগর স্ট্যানিকজাই, মোহাম্মদ নবী, গুলবাদিন নাইব, রশিদ খান, আফতাব আলম, মুজিব উর রহমান।
(দ্য রিপোর্ট/টিআইএম/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮)