সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর কলেজছাত্র গৌতম সরকারকে হত্যার দায়ে চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসাথে এ মামলার ছয় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৬ সেপে্টেম্বর) সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। বিচারক মামলায় অপর ছয় আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছেন—সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মহাদেব নগরের সাজু আহমেদ শেখ, ভাড়খালি গ্রামের নাজমুল হোসেন, একই গ্রামের শাহাদাত হোসেন ও বহেরা গ্রামের আলী আহমেদ শাওন। মামলা চলাকালে জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত আসামি শাওন ও সাজু শেখ পলাতক। বাকি দুজন রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ওমর ফারুক, নূর আহম্মেদ মুক্ত, মহসিন আলী, কবিরুল ইসলাম মিঠু, জামসেদ আলী ও ফিরোজা খাতুন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়নের মহাদেবনগর গ্রামের ইউপি সদস্য গনেশ সরকারের ছেলে সীমান্ত ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র গৌতম সরকারকে মোবাইলফোনে ডেকে নিয়ে তার বাড়ির পাশে মোকলেছুর রহমানের নির্মাণাধীন বাড়িতে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তার মুখে গুলের কৌটা ঢুকিয়ে মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। পরে লাশের বিভিন্ন স্থানে দড়ি দিয়ে ১২টি ইট ঝুলিয়ে পার্শ্ববর্তী মোকলেছুর রহমানের পুকুরে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় নিহতের পিতা গনেশ সরকার বাদি হয়ে আলী আহম্মেদ শাওন, শাহাদাৎ হোসেন, সাজু শেখ, নাজমুল হোসেন, মুহসিন আলী ও কবিরুল ইসলাম মিঠুর নামে ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পর দিন ওমর ফারুক, নূর আহম্মেদ মুক্ত ও জামসেদের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি সম্পূরক অভিযোগ দায়ের করা হয়। নাজমুল, শাহাদাৎ ও সাজু শেখ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এ ঘটনায় পুলিশ সাজু শেখের মা ফিরোজা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর সম্পূরক অভিযোগটি আদালতে পাঠানো হয়। সদর থানার উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে মামলাটির তদন্তভার ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক আশরাফুল ইসলামের কাছে ন্যস্ত করা হয়। পরে একই বছরের ১৮ এপ্রিল উপরিউক্ত ১০ আসামির নামে আদালতে অভিযোগত্র দাখিল করেন আশরাফুল ইসলাম। ২০১৮ সালের পহেলা মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে উল্লিখিত চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাদেরকে ফাঁসির আদেশ দেন। এ ছাড়া বাকি ছয় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তপন কুমার দাস জানান, রায় ঘোষণার সময় শাহাদাৎ হোসেন ও নাজমুল হোসেন আদালতে হাজির ছিলেন। তবে আলী আহম্মেদ শাওন ও সাজু শেখ পলাতক রয়েছেন।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮)