ধড় থেকে মুণ্ডু খসানো নীতিতে সরকার : রিজভী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সরকার বিরোধী দলের ধড় থেকে মুণ্ডু খসানোর নীতি গ্রহণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ‘গতকাল (বুধবার, ৩ অক্টোবর) জাতীয়তাবাদী দলের উদ্যোগে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি সম্বলিত সাক দফা এবং সুশাসনের অঙ্গীকার সম্বলিত ১২ দফা লক্ষ্যসহ একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে হস্তান্তর কর্মসূচি পালন করা হয়।’
“এই কর্মসূচি পালনের সময় সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাতীয় কবি নজরুলের সেই পংক্তিটি— ‘পুলিশ শুধু করছে পরখ, কার কতটা চামড়া পুরু’— নীতি প্রয়োগ করে চলেছে নির্বিচারে। দেশের কয়েকটি জেলায় শান্তিপূর্ণ স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে মিছিল পণ্ড করা, পাইকারি হারে গ্রেফতার এবং আক্রমণে অনেক নেতাকর্মীকে আহত হন,”— অভিযোগ রিজভীর।
তিনি বলেন, ‘চল যাই যুদ্ধে, দেশমাতার মুক্তির লক্ষ্যে’— এই স্লোগানে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালনকালে বিনা উসকানিতে পুলিশ হামলা চালিয়ে ব্যানার ছিনিয়ে নেয়। পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটায় প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন। অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চট্টগ্রাম (উত্তর) জেলা বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা প্রফেসর কুতুবউদ্দিন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপি নেতা ফজলুল হকসহ সাত জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি হস্তান্তরের আগে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখার পরপরই পুলিশের অতর্কিত লাঠিচার্জে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় বিএনপি নেতা মো. রানা, আলম সিকদার, হাসান মিয়া, আবদুল বাতেনসহ ১০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের দলীয় কার্যালয়ে ১ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশসককে স্মারকলিপি প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অভিমুখে বিএনপির একটি মিছিল এগিয়ে গেলে পুলিশ মাঝপথেই বাধা দেয়। গাজীপুর জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় সারাদিন অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ।
‘ফেনী জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন সুমনকে বুধবার (৩ অক্টোবর) গ্রেফতার করেছে পুলিশ,’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলা, নেতাকর্মীদেরকে লাঠিচার্জের মাধ্যমে আহত করা এবং গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি চান বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন প্রতিনিয়ত হামলা-মামলার শিকার। কোনো কারণ ছাড়াই কাল্পনিক মামলার বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে এই ভোটারবিহীন সরকার। কোনো ওয়ার্ডেই তিন জন নেতাকর্মী একসাথে চলাফেরা করতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ির সামনে রাতের অন্ধকারে কালো টিনশেড গ্লাস দিয়ে ঢাকা মাইক্রোবাস থেকে নামা ব্যক্তিদের কর্কশ কড়া নাড়ার শব্দে ভেঙেচুরে খান খান হয়ে যাচ্ছে রাতের নিস্তব্ধতা। বাসাবাড়ি তছনছ করে চলছে চিরুনি তল্লাশি। তুলে নিয়ে যায় কিশোর, তরুণ, ছাত্রদল, যুবদল ও অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
‘খাল, বিল, নদীধারে মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে চলে যেতে বলে। তারপর গুলি করা হয় পেছন থেকে। তা না হলে কিছুদিনের জন্য, নয়তো চিরদিনের জন্য গুম করে অদৃশ্য করা হচ্ছে। অথবা লকআপে চলানো হয় অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন,’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহদফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/অক্টোবর ০৪, ২০১৮)