মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পেলেন আটকে থাকা ৭০ হাজার কর্মী
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পেলো পাইপলাইনে আটকে থাকা ৭০ হাজার কর্মী।
জিটুজি-প্লাসে অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে দেশটিতে কর্মী পাঠিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। একতরফা ও অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ওঠার পর ১ সেপ্টেম্বরের পর বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বাতিল করে দেশটি।
এই প্রেক্ষাপটে দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতায় ২৫ সেপ্টেম্বর দুই দেশের কর্মকর্তারা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক করেন। অনলাইনে নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করার পর থেকে বাংলাদেশি কোনো কর্মীকে আর কাজের অনুমতিপত্র দেয়নি মালয়েশিয়া।
কিন্তু ১ সেপ্টেম্বরের আগে কাজের অনুমতি পাওয়া ৭০ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার বাধা কাটল। বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) দূতাবাস থেকে দেওয়া হচ্ছে এ্যাটাষ্টেশন।
এদিকে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল হলেও গত ৩০ আগস্টের আগে যেসব বাংলাদেশি কাজের অনুমতিপত্র পেয়েছেন, তাঁদের সবাই আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাঁদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ব্যবস্থা করল দেশটির সরকার। বাংলাদেশকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে মালয়েশিয়া। এর ফলে প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন।
এ বিষয়ে হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর ও অতিরিক্ত সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত দুই দেশের মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ওই বৈঠকের দুটি দিক ছিল। প্রথমত, কর্মী নিয়োগের নতুন পদ্ধতি ঠিক করা। দ্বিতীয়ত, সে দেশে অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশের কর্মীদের বিষয়টি সুরাহা করা।
এ ছাড়া অপেক্ষমান কর্মীদের মালয়েশিয়ায় যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করা। অপেক্ষমান কর্মীদের মধ্যে ২০ হাজার কাজের অনুমতিপত্র পেয়েছেন। তাঁরা মালয়েশিয়ার ভিসার জন্য আবেদনও করে রেখেছেন। বাকি ৫০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া থেকে কাজের অনুমতিপত্র পেয়েছেন।
সায়েদুল ইসলাম জানান, হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলামের কূটনৈতিক তৎপরতায় তার দিক নির্দেশনায় দেশটির প্রসাশনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে পাইপলাইনে আটকে থাকা ৭০ হাজার কর্মী যাওয়ার জট খুলেছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া তিনটি বিষয়ে জোর দিয়েছে। কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াটি হবে প্রতিযোগিতামূলক, এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, অভিবাসনের ব্যয় কমানো এবং আইনসম্মত উপায়ে অভিবাসনের ব্যবস্থা করা।
আগের পদ্ধতি বাতিল হওয়ার পর নতুন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার আগে অন্তর্বর্তীকালীন পদ্ধতি অনুসরণ করবে দুই দেশ।
তবে এ প্রক্রিয়ার আওতায় কর্মী নিয়োগ শুরুর আগে এমওইউ (দুই দেশের মধ্যে হওয়া সমঝোতা স্মারক) সংশোধন করা হবে। এই সংশোধনীর জন্য দুই দেশের মন্ত্রিসভার সম্মতি এবং আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে অন্তত কয়েক সপ্তাহ লাগবে।
এর আগ পর্যন্ত কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুই দেশ অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থায় একই সঙ্গে অনলাইন ও সনাতন পদ্ধতির সমন্বয়ে হবে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, অনলাইন পদ্ধতিতে সব সময় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের সুযোগ থাকায় শেষ পর্যন্ত অনলাইনেই হবে চূড়ান্ত ব্যবস্থা। আর এসপিপিএতে সুফল পাওয়ায় চূড়ান্ত ভাবে আবার সেই পদ্ধতিতে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে সে দেশের সরকার।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে কোনো হার নির্ধারণ হয়েছে কি না জানতে চাইলে শ্রম কাউন্সিলর জানান, অভিবাসন ব্যয় কমানোর বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষ বিস্তারিত আলোচনা করেছে। তবে কোনো হার বৈঠকে চূড়ান্ত না হলেও এরই মধ্যে শুরু হয়েছে সিন্ডিকেট করার পায়তারা।
মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্টরা বারবার জানিয়ে আসছেন কোনো মতেই তারা সিন্ডিকেশন করতে দিবেন না। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেশন করতে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছেন?
প্রবাসীরা বলছেন যদি সিন্ডিকেশন হয় তাহলে ফের বন্ধ হয়ে যাবে মালয়েশিয়ার বাজার। এ দিকে অভিবাসনের খরচ যাতে কমানো যায় সে বিষয়টিতে জোর দিয়েছে মালয়েশিয়া।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/অক্টোবর ০৫,২০১৮)