দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য থেকে জ্বালানী, এলপিজিগ্যাস ওঅ্যাভিয়েশন বাজেট ফুয়েল উৎপাদনের কথা জানালেন ড. মইন উদ্দিন সরকার ও ড. আনজুমান সেলী।

প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈল উৎপাদনে প্লান্ট স্থাপন করে বাংলাদেশের বর্জ্যব্যবস্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব করতে চান তারা। তাদের তৈরি যন্ত্রগুলো দিয়ে একটন প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য থেকে ১৩০০লিটার ডিজেল, ১০ সিলিন্ডার এলপিজিগ্যাস এবং ২৩ লিটার অ্যাভিয়েশন বাজেট ফুয়েল উৎপাদন করা সম্ভব।এতে ডিজেলের মূল্য হবে লিটার প্রতি ২০ টাকা। এ ব্যতিক্রমী কাজের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহায়তা চেয়েছেন তারা।

রাজধানীর ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. মইন উদ্দিন সরকার ও ড. আনজুমান সেলী এসব তথ্য জানান।

এসময় ড. মইন উদ্দিন বলেন, ‘সারা দুনিয়ায় দিনে দিনে বাড়ছে প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার, সেই সঙ্গে আমাদের চার পাশে জমছে প্লাস্টিক বর্জ্য।যা হয়ে ওঠেছে আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।প্লাস্টিক পচনশীল নয় বিধায় মাটি হারাচ্ছে তার উর্বর শক্তি।খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে। ড্রেনের পয়ঃনিষ্কাষন ব্যবস্থা রোধ হচ্ছে ফলে মশামাছির প্রকোপ বেড়েই যাচ্ছে এবং বৃষ্টিহলে শহরে নৌকা চালাতে হচ্ছে।প্লাস্টিক ও পলিথিন-এর প্রাদুর্ভাবে বন ও জলজজীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে।’

‘শুধু আমেরিকাতেই প্রতিবছর ৮০ বিলিয়ন পাউন্ড প্লাস্টিক উৎপাদন হয় যার মাত্র ৬ শতাংশ অর্থাৎ ৪.৮বিলিয়ন পাউন্ডপূণঃপ্রক্রিয়াজাত করা হয়। আমাদের জানা মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৮ মিলিয়ন মেট্রিকটন মিউনিসিপ্যাল সলিডওয়্যাস্ট (এমএসডব্লিউ) বর্জ্র্য উৎপাদন হয় যার মধ্যে ১৫ শতাংশই প্লাস্টিক অর্থাৎ ৪.২মিলিয়ন প্লাস্টিক।যার মাত্র ১০শতাংশ পূণঃপ্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হয়।১৯৫০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ৬.৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে যার মাত্র ৯ শতাংশপূণঃ প্রক্রিয়াজাতকরণ সক্ষম হয়েছে।’

‘২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন টন বর্জ্য প্লাস্টিক সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে।যা প্রায় ৭০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীকে হুমকির মুখে ফেলেছে।তাই বর্জ্য প্লাস্টিকের সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০৫ সাল থেকে আমি ও আমারসহকর্মী ড. আনজুমান সেলী গবেষণা শুরু করি এবং ২০১০ সালে প্লাস্টিক থেকে তেল উৎপাদনের একটি প্রযুক্তি ও তার পেটেন্ট তৈরি করি।যান বায়নযোগ্যশক্তি, যুক্ত-রাষ্ট্রের দ্রুত জন প্রিয় হয়ে ওঠা প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম।প্রায় দুইদশক গবেষণার পর আমরা সাফল্যের সাথে একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে সক্ষম হই , যার প্রতিটন পরিত্যাক্ত প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য থেকে ১৩০০ লিটার জ্বালানী তেল, ১০ সিলিন্ডার এল.পি.জি গ্যাস, এবং ২৩ লিটার জেটফুয়েল উৎপাদন করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিজের গবেষণার সাফল্যেকে বাস্তব রুপ দিতে আমি নিজেই আমেরিকায় প্লান্ট গড়ে তুলেছি।পরিত্যাক্ত প্লাস্টিক থেকে জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলছি।উৎপাদন কোম্পানির নাম Waste technologies LLC, (আমেরিকা-যুক্তরাষ্ট্র) কোম্পানি প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকে তেল তৈরির কাজসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার।বর্তমানে কোম্পানিটি বাংলাদেশে ও এর কমের প্লান্ট করতে যাচ্ছে।বাংলাদেশে এই কেন্দ্র স্থাপন হলে একাধারে যেমন দেশকে ক্ষতি কারক প্লাস্টিকের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে, তেমনি দেশের স্বল্প শিক্ষিত থেকে শুরু করে শিক্ষিত যুবকদের ব্যাপক কর্মসংস্থান ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।দেশ অর্জন করতে পারবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো সক্ষম হবে।বাংলাদেশকে এশিয়ার বর্জ্য প্লাস্টিক পূনঃপ্রক্রিয়াজাত করণের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে দেশের আলাদা একটি জায়গা করতে সক্ষম হবে।

মেধাবী এই বিজ্ঞানী বলেন, বাংলাদেশে একটি প্লান্ট স্থাপন করতে ১১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।তারা ও এটিকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করে সার্বিক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মাধ্যমে এ আবিষ্কারকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/অক্টোবর ০৮, ২০১৮)