আদালতে বিচারক, যেকোনো সময় গ্রেনেড হামলার রায়
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা রোডের বিশেষ আদালতে উপস্থিত হয়েছেন বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। এছাড়া রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও সেখানে উপস্থিত হয়েছেন।
পুলিশি পাহারায় বুধবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন নাজিমুদ্দিন রোডের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন। এর আগে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সেখানে উপস্থিত হন।
গ্রেনেড হামলার রায় ঘিরে সবার নজর এখন আদালতের দিকে। যেকোনো সময় রায় ঘোষণা হতে পারে।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের বিশেষ নিরাপত্তায় আলিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে নেয়া হয়।
এদিকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘিরে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। সরেজমিন দেখা যায়, বুধবার সকাল থেকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা রোডের বিশেষ আদালতের চারদিকের সব রাস্তা প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যারিকেড বসিয়ে তল্লাশি মাধ্যমে মানুষজনকে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে।
সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কাউকে আদালতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
এদিকে, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা বিধানে যা যা দরকার তাই করা হবে। কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে তা বরদাস্ত করা হবে না, কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে না।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় হবে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে।
এর আগে ৩১ আসামিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর ও আব্দুস সালাম পিন্টুও রয়েছেন। বুধবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে বাড়তি নিরাপত্তা দিয়ে তাদের পাঠানো হয়।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ১ ও ২–এর ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগার ১ ও ২-এ থাকা ১৪ আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, হাইসিকিউরিটিতে থাকা ১৭ জন আসামিকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিনজন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল।
৪৯ আসামির মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তাজউদ্দিনসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন।
গ্রেনেড হামলার ওই ঘটনায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র, ঘটনায় সহায়তাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি মামলার আসামি সংখ্যা মোট ৪৯ জন। একই ঘটনায় ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে (সংশোধনী-২০০২) অপর একটি মামলায় আসামি সংখ্যা ৩৮ জন।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হয়েছিল গ্রেনেড হামলা; তাতে ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন। প্রাণে বেঁচে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় শেখ হাসিনার শ্রবণশক্তি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিতের চেষ্টার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জঙ্গিনেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।
দুই বছর পর ২০০৯ সালে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ হলে আরও দুই বছর সময় নিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন সিআইডি কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকসহ ৩০ জন আসামির তালিকায় যোগ হন। সব মিলিয়ে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে। এর মধ্যে জামায়াত নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদ, জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নান ও বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় আসামি এখন ৪৯ জন।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/অক্টোবর ১০, ২০১৮)