পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আলো খুঁজতে যাওয়া বােকামী
মাওলানা তারিক জামিল
কম-বেশ আজকের গােটা মুসলিম সমাজই পশ্চিমা শিক্ষা ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। কিন্তু পশ্চিমা সংস্কৃতিতে মৃত্যুর পরের জীবনের যেমন কোন ছায়া নেই, তেমনি পশ্চিমা শিক্ষাও সে বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরব। আখেরাত সম্পর্কে পশ্চিমা শিক্ষা ও সংস্কৃতির অবস্থান একেবারে নিকষ অন্ধকারে।
আসলে পূর্বপশ্চিম আর উত্তর-দক্ষিণ যাই বলি না কেন, মানুষের ইলম ও জ্ঞান আখেরাত সম্পর্কে কোনরূপ ধারণা দিতে অক্ষম। এ সম্পর্কে মানব-মস্তিষ্ক নিঃসৃত জ্ঞান কিছু বলে না, বলতে পারেও না ।
বিগত দু’শ বছর থেকে আমরা যে ইউরােপীয় সংস্কৃতির রাহুগ্রস্ত হয়ে আছি, এবং আমাদের বিবেক-বিবেচনার চোখে ঠুলি এঁটে নিতান্ত অন্ধের মত যাদের অনুকরণ করে চলেছি, তাদের সংস্কৃতি ও জীবন যাপনের পদ্ধতিতে আখেরাত সম্পূর্ণ উপেক্ষিত ও অস্বীকৃত। তারা কেবল দুনিয়ার জীবনকে জৌলুশপূর্ণ করে তােলার পদ্ধতি নিয়েই আলােচনা করে থাকে।
আল্লাহ পাকের লাখাে শােকর যে, আমরা আখেরাতকে অস্বীকার করি না। কিন্তু, তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রভাব আমাদেরকে আখেরাত এতটাই ভুলিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের জীবন যাপনে তার ন্যূনতম ছায়া পরিলক্ষিত হয় না।
এই যে ‘লাহাের শহরকে তিলােত্তমা নগর হিসাবে গড়ে তােলার ঘােষণা—এটা তাে আমাদেরকে শুধু এই প্রতিশ্রুতিই দেয় যে, হয়ত নগরের চারিদিকে সবুজের ছড়াছড়ি থাকবে।
পাহাড় ও উপত্যকার শ্যামল গা বেয়ে আঁকাবাঁকা ঝরণা ও নদী-নালার কলকল-ছলছল ধারা প্রবাহিত হবে। সড়কগুলাে হবে মসৃণ ও প্রশস্ত । ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন থাকবে। স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল তথা যাবতীয় নাগরিক সুবিধাদি সুলভ্য করে তােলা হবে।
কিন্তু আল্লাহ্ পাক এ সম্পর্কে বলেছেন—তিলােত্তমা নগরের নির্মাতা পৃথিবীতে তােমরাই একমাত্র নও। তােমাদের পূর্বেও এমন কওম অতিবাহিত হয়েছে, যারা শৈল্পে ও নান্দনিকতায় তােমাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ ও দৃষ্টিনন্দন নগর নির্মাণ করেছিল ।
কিন্তু যখন তারা আল্লাহ্ পাকের নাফরমানী আরম্ভ করল, তখন আল্লাহ পাক তাদের উপর আযাবের এমন চাবুক মারলেন যে, গােটা জাতি তছনছ হয়ে গেল। একটু তাকিয়ে দেখ, সেই সুসজ্জিত বাগিচা এখনাে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু বাগিচার ফল ভক্ষণকারীরা কোথায় হারিয়ে গেছে ।
কুলকুল রবে নিঝরণী বয়ে চলেছে এখনাে, কিন্তু সেই দৃশ্য অবলােকন করে আনন্দলাভকারীদের আজ কোন অস্তিত্ব নেই। সুদৃশ্য পার্ক, পাঁচ তরকা হােটেল, নৃত্যশালা ও নাট্যশালা এবং আনন্দ-উল্লাশের যাবতীয় উপকরণ পড়ে আছে নিরবে। শুধু সেগুলাে ভােগ করার জন্য কেউ আজ আর বেঁচে নেই।
এই সুদৃশ্য মহলে এক সময় তারা নেশায় চুড় হয়ে নর্তকীকে বাহুডােরে আবদ্ধ করে পড়ে থাকতাে। আমি তাদের সকলকে উঠিয়ে সমুদ্রের প্রবল-প্রচণ্ড ঢেউয়ের কাছে অর্পণ করে দিলাম। তােমাদের হৃদয়ে যদি আমার সামান্য ভয়ও থেকে থাকে, তাহলে ভয় করতে থাকো। অন্যথায় পরিণামের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও।
দুনিয়া ও আখেরাত, এই উভয় জীবনের সুখের জন্য আমরা জীবন যাপনের একটি মনগড়া প্রণালী প্রস্তুত করে নিয়েছি। যেহেতু সেই প্রণালী পশ্চিমা শিক্ষা ও সংস্কৃতিপুষ্ট, তাই সে জীবন-প্রণালীতে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্য যাবতীয় আয়ােজন থাকলেও আখেরাতের কোন স্থান নেই ।
সন্ধ্যায় পশ্চিমে সূর্য ডুবে গিয়ে যেমন পৃথিবীকে নিকষ অন্ধকার উপহার দিয়ে যায়, পশ্চিমা শিক্ষা ও সংস্কৃতিও তেমনি আমাদেরকে কিছু অন্ধকার ছাড়া কোন আলাে উপহার দিতে পারে না। তাতে আলাে খুঁজতে যাওয়াও বােকামী।
লেখক: আলেম ও দাঈ
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/অক্টোবর ১৩,২০১৮)