নবজাতককে নিয়ে হাসপাতালের পাঁচতলা থেকে মায়ের লাফ
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) সকাল নয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের দি ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড স্পেশালাইজড হসপিটালের ওপর থেকে হঠাৎ একটি নবজাতক শিশুকে রাস্তায় আছড়ে পড়তে দেখে পথচারীরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরক্ষণেই তারা লক্ষ্য করেন হাসপাতালের পাঁচ তলা থেকে একজন নারী নিজেও লাফ দেয়ার চেষ্টা করছেন। খবর বিবিসির
সেই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা শাহাদত হোসেন।
তিনি বলছিলেন "আমরা কাছে গিয়ে দেখলাম শিশুটি স্পট ডেড। তখন আমরা নীচ থেকে সবাই জড় হয়ে ঐ মহিলাকে বার বার নিষেধ করছিলাম যাতে সে লাফ না দেয়। কিন্তু সেই কিছুক্ষণের মধ্যেই সে লাফ দিল।"
ঘটনাস্থলেই নারীটিও মারা যান।
হাসপাতাল এবং স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, সাথী আক্তার নামে এই নারী গত ১৬ তারিখে দি ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড স্পেশালাইজড হসপিটালের পাশের একটি হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতালে তার সাথে ছিলেন তার মা।
প্রত্যক্ষদর্শী শাহাদত হাসেন জানান বলেন, লাইফ কেয়ার শিশু জেনারেল হাসপাতালে যেখানে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন সেখানে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, গতকাল রাতভর ঐ ঘর থেকে কথা-কাটাকাটির শব্দ শোনা গেছে বলে পাশের কক্ষে থাকা লোকজন তাকে বলেছেন।
তিনি বলছিলেন "৩০২ এবং ৩০৩ এই দুটি রুমের জন্য একটা এসি বরাদ্দ থাকায় কিছুটা গ্যাপ ছিল। ৩০৩ নং রুমে ছিলেন ফরিদা খাতুন নামে এক রোগি। তিনি বলেন বাচ্চাটা সারা রাত কেঁদেছে, তার কান্নার জন্য তারা ঘুমাতে পারেনি। একই সাথে সীমা তার মায়ের সাথে ঝগড়া করছিল। তাকে ফোনেও কথা বলতে শোনা গেছে। তারা ধারণা করছেন সীমা তার স্বামীর সাথে সেই সময় কথা বলছিলেন।"
'গতরাত থেকে তাকে মেন্টালি ডিজ-ওর্ডার লাগছিল'
সীমার স্বামী লেবাননে থাকেন। বছর খানেক আগে তাদের বিয়ে হয়।
কিন্তু নবজাত শিশুকে নিয়ে কি কারণে তিনি এই আত্মহননের পথ বেছে নিলেন সেই সম্পর্কে কেও ধারণা করতে পারছেন না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন বলেন ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা সীমার মাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, কিন্তু সন্দেহজনক কোন কিছু এখনো তারা পাননি।
পুলিশের ঐ কর্মকর্তা বলেন, "মেয়ের মা বলছে গতকাল থেকেই তাকে মেন্টালি ডিজ-অর্ডার লাগছিল। সে কারো কিছু না বলে তার বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেছে এবং পার্শ্ববর্তী আরেকটা হাসপাতাল থেকে বাচ্চাকে ফেলে দিয়ে নিজেও পড়ে গেছে। আসলে এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা তদন্ত করছি, একটা মামলা হয়েছে"।
পুলিশ বলছে, হাসপাতালের ভিডিও ফুটেজে তারা দেখেছেন বাচ্চাকে কোলে করে মহিলা হাসপাতালে তার নিজের কক্ষ থেকে বের হয়ে আসছেন। তার মা বলছেন, সেই সময়ে তিনি ঘরে ছিলেন না।
এদিকে অস্বাভাবিক এই মৃত্যুর ঘটনায় শহরে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মি. হোসেন বলেন, পুরো শহর জুড়ে মানুষজন এ নিয়ে কথা বলছে। "আমাদের কাছে খুব রহস্যজনক মনে হচ্ছে।"
পুলিশ বলছে এই ঘটনায় নিহত সাথীর শ্বশুর বাড়ীর লোকজনকে ডাকা হয়েছে কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা এখনো আসেন নি।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/অক্টোবর ১৯ ,২০১৮)