এবার মইনুলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ময়মনসিংহের আদালতে মামলা করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও ভালুকা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানা মনি মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) সকালে এই মামলা করেন।
মনিরার আইনজীবী পিযুষ কান্তি সরকার সাংবাদিকদের জানান, অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম রোজিনা খান মামলাটি আমলে নিয়ে বিকেলে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
গত ১৬ অক্টোবর একাত্তর টেলিভিশনের টক শো ‘একাত্তর জার্নাল’-এ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি প্রশ্ন করেন, ‘আপনার কাছে আমার একটি প্রশ্ন আছে। সেটি হচ্ছে যে বলা হচ্ছে যে আপনি এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় বা যুক্তফ্রন্ট বলছে, ঐক্যফ্রন্ট, এই ঐক্যফ্রন্টে আপনি যে হিসেবে উপস্থিত থাকেন, আপনি বলেছেন আপনি একজন নাগরিক হিসেবে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু অনেকেই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হচ্ছে যে আপনি জামায়াতের প্রতিভূ হয়ে ওখানে উপস্থিত থাকেন। এটি একটি প্রশ্ন। আপনি কি আসলেই জামায়াতের প্রতিনিধি হয়ে ওখানে উপস্থিত থাকেন কি না। এক নম্বর প্রশ্ন। আর দুই নম্বর প্রশ্ন হচ্ছে…।’
এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে রেগে গিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই। আমার সঙ্গে জামায়াতের কানেকশনের কোনো প্রশ্নই নাই। আপনি এই প্রশ্ন করেছেন, আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। অন্য প্রশ্ন করেন। শিক্ষিতা ভদ্র মহিলা হিসেবে অন্য প্রশ্ন করেন।’
এরপর সঞ্চালক মিথিলা ফারজানা বলেন, ‘ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে সকলেই আমার সম্মানিত অতিথি। তাদেরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ কেউই করতে পারেন না। উনি প্রশ্ন করেছেন যেটি।’
এ সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে যে আমি জামায়াতের লোক। আপনি সেটা বন্ধ করেন না কেন?’
মাসুদা ভাট্টিকে প্রকাশ্যে সরাসরি অনুষ্ঠানে চরিত্রহীন বলায় দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে এ মন্তব্যের জন্য ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ব্যক্তিগতভাবে মাসুদা ভাট্টির কাছে ফোন করেন এবং লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু মাসুদা ভাট্টি তাকে ক্ষমা করেননি। ওই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গত রোববার দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে মানহানির মামলা করেন মাসুদা ভাট্টি। আদালত ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পাশাপাশি মইনুলের একই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রোববার সকালে তাঁর বিরুদ্ধে জামালপুরের আদালতে ২০ হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন যুব মহিলা লীগের জামালপুর শাখার আহ্বায়ক ফারজানা ইয়াসমীন লিটা। আদালত সে মামলা আমলে নিয়েও ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
মানহানির ওই দুই মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে রোববার বিকেলে পাঁচ মাসের জন্য আগাম জামিন দেন বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এ ছাড়া ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে রংপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ভোলা ও কুড়িগ্রামে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একাধিক মামলায় পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
এরই মধ্যে গতকাল রাত ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহাবুব আলম জানান, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে মানহানিকর উক্তির অভিযোগে রংপুরে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। এ মামলায় পুলিশ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জেএসডির সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।
রাত ১০টার দিকে ব্যারিস্টার মইনুলকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর সেখানে হাজির হন ব্যারিস্টার মইনুলের আত্মীয়স্বজন ও আইনজীবী। সেখানে তাঁর আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মাসুদা ভাট্টি মানহানির মামলা করেন। আরো দুজন মহিলা মামলা করলেন সম্পূর্ণভাবে বেআইনিভাবে। আমি মনে করি, এটা মানহানির মামলা না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য দেশের গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি হিসেবে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/অক্টোবর ২৩, ২০১৮)