দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ঢাকার বিভিন্ন এলাকার তল্লাশি চৌকিতে নিরাপত্তার নামে পুলিশের হয়রানির অভিযোগ নতুন কিছু নয়।

তবে সম্প্রতি রাজধানীর একটি চেকপোস্টে রাতের বেলা সিএনজি অটোরিক্সা থামিয়ে এক নারী আরোহীকে পুলিশের হয়রানির ভিডিও বিষয়টিতে নতুন করে আলোচনায় আনে।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এ বিষয়ে বিবিসি সাধারণ মানুষের কাছে জানতে চান কখনও তাদের এ ধরণের হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছিল কিনা।

এরপর মানুষ যে হারে হয়রানির অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন, সেটা ধারণার বাইরে।

তারা জানান, কীভাবে তল্লাসির নামে তাদের চেকপোস্টে তাদের হয়রানি করা হয়েছে। অসৌজন্যমূলক ও বিব্রতকর প্রশ্নের পাশাপাশি গায়ে হাত তোলার কথাও বলেছেন কেউ কেউ।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ বা আনসার কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে কনস্টেবল বা তাদের সমমানের যারা সেখানে কাজ করেন, তারাও অনেক সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবেও যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন।

শরীফ নামে একজন যে অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন তা রীতিমত ভয়াবহ।

তিনি লিখেছেন, "আব্দুল্লাহপুর পুলিশ চেকপোস্টে সিগন্যাল দিল থামার জন্য। সাথে-সাথে‌ই থেমে যাই। পুলিশ কর্মকর্তা‌ বললেন আমাদের ব্যাগ চেক করবেন। আমি বললাম ঠিক আছে ভাই, চেক করেন তবে একটু তাড়াতাড়ি করবেন। এই কথা বলার পর ঐ পুলিশ সদস্য আমাকে সবার সামনে শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে তাদের রুমের ভেতর মানে পুলিশ বক্সের ভিতর নিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই লাথি, ঘুষি মারতে শুরু করে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। অবশেষে আমার কি অপরাধ তা আমি না বোঝা সত্ত্বেও তার পা ধরে কান্নাকাটি করে মুক্তি পেয়েছিলাম। ঐ ঘটনার কথা মনে হলে এখনো আমার গা শিউরে উঠে।"

হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন মনির নামে আরেকজন।

তিনি লেখেন, "আমাকে তল্লাশি করে কিছু পায়নি। প্রায় ১ ঘণ্টার উপরে টহল গাড়িতে ঘুরিয়ে, আপত্তিকর নানা প্রশ্ন করতে থাকে! এক পর্যায়ে আমার কাছে কেনাকাটা করার জন্যে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ছিল, তা তারা নিয়ে যায়। আমি অসহায়ত্ব মনে বাসার পথে হাটা ধরি! এখনো কোথাও পুলিশের কাছে সহযোগিতা আশা করি না বরং এড়িয়ে চলি।"

চেকপোস্টে বিরূপ অভিজ্ঞতা রয়েছে মাহমুদুল হাসানেরও। তিনি লিখেছেন, "আমার মোবাইল এবং জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলো। আমি প্রশ্ন করা মাত্রই বলল, আমি নেশা করে আসছি। তাই আমার সাথে কথা বলবে না, আমার বাসার সাথে কথা বলবে। বলে রাখা ভালো, আমার আব্বু হার্টের রুগী। আমি তাদেরকে অ্যালকোহল ডিটেক্টরের এর কথাও বলি। কিন্তু তারা বাসায় কথা বলবেই। পরে আমি বাধ্য হয়েই বাসায় ফোন দেই। কিন্তু তখন আর তারা কথা বলবে না। তারা বলে, হুদাই বাসায় ফোন দিয়ে লাভ কি। কিছু খরচাপাতি দিয়ে দেন। এত রাত হইছে, চা-বিড়ি খেতে হবে। আমিও নিরুপায়। তারা অনেক খারাপ ভাষায় গালাগালি করছিলো এবং টুকটাক হুমকি দিচ্ছিল।"

ফেসবুক কমেন্টে নাফিসা ইয়াসমিন নামে একজন জানান, "ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়াকালীন সময়ে কয়েকজন বান্ধবী মিলে মার্কেটে যাচ্ছিলাম বই কিনতে। কিছু পুলিশ,'আপুরা চলেন না সবাই মিলে সেল্ফি তুলি' এছাড়াও আরো নানা ধরনের প্রশ্ন করছিলো অযথাই। সব দেশে পুলিশ আশ্রয় এর নাম, এই দেশে পুরাই বিপরীত।"

প্রায় একই ধরণের অভিযোগ করেন এলিজাবেথ এস, নামে আরেক জন।

তিনি জানান, "এদের পাস করার সময় একেকজনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ/আই মোশন চেঞ্জ হয়ে যায়, ‌অ্যান্ড দ্য চেইঞ্জিং ইজ নট পজিটিভ অ্যাট অল।"

এ ব্যাপারে নাজমুস সাকিব নামে একজন বলেন, "আমার মতে মেয়েদের তল্লাশি চালানোর সময় মহিলা পুলিশ এর প্রয়োজন মনে করছি।"

গভীর ক্ষোভ জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, "বিনা অপরাধে আমাদের কেই এভাবে হ্যারাস করবেন এটা তো কোনও বাহিনীর কাজ হতে পারে না! আর কাল একটা মেয়ের সাথে পুলিশ যা করলো সেটা দেখে মনে হল পুলিশ হলেই রাস্তায় যা খুশি তা ই করা সম্ভব! পুলিশ কিভাবে জনগণ এর বন্ধু হয়?"

এছাড়া দম্পতিদের দেখলে আপত্তিকর মন্তব্য করা, মোবাইল বা অন্য কোন পণ্য রেখে দেয়া, ঘুষ নেয়াসহ আরও নানা হয়রানির কথা বিবিসিকে জানিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

হয়রানির শিকার হলে কার কাছে যাবেন?

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওই নারীকে হয়রানির কারণে রামপুরা থানার এক সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ (এএসআই) তিন পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে আছে বলে জানা গেছে।

তবে এ ধরণের ঘটনার সম্মুখিন হলে কি করবেন? এ বিষয়ে জানতে কথা হয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশের মুখপাত্র সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি ৫টি উপায়ের কথা তুলে ধরেন।

যে চেকপোস্টে হয়রানির শিকার হবেন, সেখানকার ইউনিট প্রধানের কাছে প্রাথমিক অবস্থায় অভিযোগ দায়ের করা যাবে।

নাহলে সংশ্লিষ্ট থানায় সরাসরি যোগাযোগ করে দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করতে হবে।

থানাতেও যদি প্রয়োজনীয় সেবাটি না পাওয়া যায়, তাহলে তার চাইতেও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে যেতে হবে।

বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটেও সরাসরি অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ আছে ।

সবশেষে, কোন ভুক্তভোগী যদি মনে করেন যে এই অভিযোগ দায়েরের পরও তিনি ন্যায়বিচার পাননি, তাহলে তিনি অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দফতরে আইজিপি কমপ্লেইন মনিটরিং নামে একটি সেল রয়েছে, সেখানে অভিযোগ করতে পারেন - বলেন পুলিশ মুখপাত্র।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/অক্টোবর ২৪,২০১৮)