পুলিশ ব্যাংকের অনুমোদন, ৩ ব্যাংক অপেক্ষায়
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে শুরুতে আপত্তি জানালেও শেষ পর্যন্ত আরও চার ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ, দ্য বেঙ্গল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক ও দ্য সিটিজেন ব্যাংক।
এর মধ্যে পুলিশ সদস্যদের মালিকানায় কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাকি তিন ব্যাংকের কোনোটির কিছু কাগজপত্র ত্রুটি, উদ্যোক্তাদের সম্পদ থাকার সত্যতা ও ভ্যাট পরিশোধ বিষয়ে ক্লিয়ারেন্স প্রদান করতে বলা হয়েছে।
এসব তথ্য যথাযথ ভাবে উপস্থাপন করার পর হয়ত বাকি তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হতে পারে।
সোমবার গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন ব্যাংক অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় কমিউনিটি পুলিশ ব্যাংককে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে প্রস্তাবিত বাকি তিনটি ব্যাংক দ্য বেঙ্গল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক, দ্য সিটিজেন ব্যাংকের বিষয়ে এখনও অনুমোদনসংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাকি তিনটি ব্যাংকের মধ্যে বেঙ্গল ব্যাংকের তিন জন পরিচালকের নামে কর সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। এনবিআরের সাথে সেটি নিষ্পত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি দেওয়া হবে। আর পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যানের যুক্তরাষ্ট্রে কী পরিমাণ নিট সম্পদ আছে সেটি জানতে চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তার সত্যতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া সিটিজেন ব্যাংকের কাগজপত্রে কিছু ত্রুটি আছে সেগুলো সংশোধন করে নতুন প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সংখ্যক ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ায় শুরু থেকেই সমালোচনা করে আসছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, ৯টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক এমন এক সময়ে নতুন চার ব্যাংকের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে— যখন পুরো ব্যাংক খাত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলছেন, ‘ব্যাংকিং খাত খুব বেশি বড় হয়ে গেছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘অর্থনীতি তো এত বড় নয়, তবু প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনও বিবেচনায় নতুন ব্যাংক দেওয়া ঠিক হয়নি।
তিনি বলেন, ব্যাংক খাত এখন নাজুক অবস্থায় রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আরও চারটি ব্যাংক যুক্ত হলে এই খাতে বিশৃঙ্খলা বাড়তে পারে। কারণ ব্যাংকগুলো নতুন কোনো পণ্য আনতে পারে না। বরং শুধু নিজেদের লোকজন নিয়োগ দিয়ে এ খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক এতগুলো ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংক খাতে দক্ষ জনবলেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে জানান সাবেক এই গভর্নর।
জানা গেছে, বেশ কিছু শর্তে নতুন ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে— তিন বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ইস্যু, মোট ঋণ ও অগ্রিমের অন্তত পাঁচ শতাংশ কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। লাইসেন্স পাওয়ার পর ৪শ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন জোগাড় করে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে নতুন ব্যাংকগুলো।
কারা পাচ্ছেন নতুন চার ব্যাংক: কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশের মালিক হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ ফান্ডের টাকায় এই ব্যাংকটি পরিচালিত হবে।
বেঙ্গল ব্যাংকের (বাংলা ব্যাংক) মালিক হচ্ছেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের ভাই।
দ্য সিটিজেন ব্যাংকের মালিক হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক।
এছাড়া পিপলস ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা চট্টগ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এম এ কাশেম। তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
(দ্য রিপোর্ট /একেএমএম/অক্টোবর ৩০,২০১৮)