জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে ডেথ সার্টিফিকেট নিতেও ঘুষ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ডেথ সার্টিফিকেট নেতেও ঘুষ দিতে হয়। প্রতি সার্টিফিকেটে নেওয়া হয় ৪০০-৫০০ টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট সেলের অভিযানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ওই হাসপাতালে দুর্নীতির কারণে চিকিৎসা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে- দুদক হটলাইন ১০৬ এ এই অভিযোগ আসার পর এনফোর্সমেন্ট সেলের সমন্বয়কারী ও কমিশনের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর নির্দেশে চার সদস্যের একটি বিশেষ টিম ওই হাসপাতালে অভিযান চালায় মঙ্গলবার। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সহকারী পরিচালক ফারজানা ইয়াসমিন।
প্রায় চার ঘন্টাব্যাপি অভিযানে টিমের সদস্যরা জানতে পারেন, হাসপাতালে বেড পাওয়ার ক্ষেত্রে ওয়ার্ডবয়দের ৫০০-১০০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। দুইশ' থেকে আড়াইশ' টাকা দেওয়া হলে সিরিয়াল ভেঙ্গে ইমারজেন্সি ইসিজি করানোর সুযোগ দেওয়া হয়। এমনকি ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি সার্টিফিকেটে ৪০০-৫০০ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, অভিযানে হাসপাতালটির চিকিৎসা ব্যবস্থায় অবহেলা, উদাসীনতা ও নৈরাজ্যকর পরিবেশের চিত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে কোটি কোটি টাকায় কেনা জীবাণুনাশক অটোকেভ মেশিন অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। মেশিন মেরামতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিএমএইচডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। জীবানুমুক্তকরণের ব্যবস্থা না করেই রোগীদের হৃদযন্ত্রের অপারেশন চলছে। হাসপাতালের হিসাবে দেখা গেছে, গত আগস্টের পর ইনফেকশনের কারণে রোগী মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে।
দুদক টিমের সদস্যরা জানান তারা কারিগরি ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক ত্রুটি ও অবহেলার কারণে রোগীদের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছন।
সার্বিক অব্যবস্থাপনার বিষয়ে হাসপাতালের প্রফেসর এম আর সিজার বলেছেন, হাসপাতালের দুটি অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে একটি চালু আছে। পানি পড়ার কারণে অপরটি বন্ধ করে মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। পানি পড়ার কারণে ইনফেকশন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। তিনি ওয়ার্ডবয় ও আনসার সদস্যদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দৌরাত্বের কথা স্বীকার করেন। তাদের অপসারণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান। শিগগির দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দুদক টিমের সদস্যদেরকে আশ্বস্থ করেন তিনি।
এনফোর্সমেন্ট সেলের সমন্বয়কারি মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী গণমাধ্যকে বলেন, হৃদরোগ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় অনুশাসন ভেঙ্গে পড়েছে, এটা ক্ষমার অযোগ্য। এ ব্যর্থতা নিয়ে কারো দায়িত্বে থাকা উচিৎ নয়। দ্রুত অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি বন্ধ করা না হলে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। এসব ঘটনার পেছনে দুর্নীতিই প্রধান কারণ। দুদক এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করবে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/অক্টোবর ৩০, ২০১৮)