তরজমা: মহিউদ্দীন মোহাম্মদ

[দুনিয়া মিখাইল সাম্প্রতিক ইরাকের একজন জনপ্রিয় কবি। ১৯৬৫ সালে বাগদাদে তার জন্ম। আশির দশকে তার লেথা-লেখি শুরু । তার কবিতার ভাষা অতি সরল। তবে তা হৃদয়কে গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। কবিতা নিয়ে তার ধারণা হচ্ছে-প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও তার সাথে ভাষার নিবিড় সম্পর্ক তৈরির একটি প্রক্রিয়া মাত্র।

যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইরাকের ভিটেবাড়ি,রাস্তাঘাট ও মানুষের হৃদয় তার কবিতার অন্যতম অনুসঙ্গ।ইরাকে কবিদের মধ্যে নগণ্য সংখ্যক ব্যক্তি নারী। তার সম্পর্কে ইরাকের কবি ও খ্যাতিমান সমালোচক ফাদিল আল আজ্জাবি বলেন, তিনি তার সময়ের সেরা কবি। মিখাইলের কবিতা বিশুদ্ধ এবং সুন্দর।

দুনিয়া মিখাইল যুদ্ধক্ষেত্রের অনুসঙ্গগুলি ভালভাবেই কলমবন্দি করেছেন। আশির দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধ ও গলফের প্রথম যুদ্ধ তার কবিতাকে সত্যিকারার্থে সমৃদ্ধ করেছে।তিনি মূলত লেখেন ইংরেজি ও আরবিতে।

তিনি কবিতা ও গদ্য রচনার পাশাপাশি অনুবাদও করে থাকেন। পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক হিসেবেও কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি ওকল্যান্ড ভার্সিটির আরবি সাহিত্যের শিক্ষক। বর্তমানে কবির নিবাস আমেরিকার মিশিগানে।

আরবিতে লেখা তার গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-২০১৭ সালে প্রকাশিত في سوق السبايا ( ফি সুক আল সাবায়া), ২০০১ সালে প্রকাশিত الحرب تعمل بجد(আল হারবু তা’মালু বিজিদ্দি) ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয় على وشك الموسيقى(আলা ওয়াশকিল মাওসিকি) এছাড়া ইরেজিতে লেখা কয়েকটি গ্রন্থ

The Iraqi Nights (New Directions, 2014), Diary of a Wave Outside the Sea (New Directions, 2009), The War Works Hard (New Directions, 2005)। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বেশকিছু পুরস্কার রয়েছে ঝুলিতে।]

১.
মেয়েটি আটকে রেখেছে কান-
শেলের শব্দ যেন ঢোকে না কুহরে:
ছেলেটি বলেনি কখনো মেয়েটিকে
মেয়েটি শুনতে চেয়েছিল সবকিছু।

২.
ছবিতে দুজন এক ইঞ্চি
পার্থক্যে মুখোমুখি:
ফ্রেমবন্দি হাসি ধ্বংসস্তুপের তলে
ঢেকে গেছে।

৩.
সাগরে
ছোড়ো যখনি তুমি পাথর
আমার দিকে পাঠায় সে ঢেউতরঙ্গ

৪.
আমার হৃদয় খুব ছোট বলে
দ্রুতই ছাপিয়ে যায়

৫.
পানির প্রয়োজন পড়ে না যুদ্ধের
অন্য পানির সাথে মিশে যেতে
অথবা শূন্যস্থান ভরতে

৬.
গাছ কখনো সওয়াল করে না অন্য বনের কাছে-
কেন সে চলতে পারে না,
করে না ভ্রান্ত প্রশ্ন একটিও।

৭.
লোকটি টিভি দেখছে
সেমুহূর্তে মেয়েটি ধরে আছে একটি নভেল।
নভেলের প্রচ্ছদে-
একজন মানুষ টিভি দেখছে এবং
রমণি ধরে আছে একটি নভেল

৮.
সেই একই সূর্যের নিচে
নতুন বছরের প্রথম সকালে
পরস্পরকে দেখি।

৯.

মেয়েটি ছেলেটির মাথা গুজে নেয় বুকে।
ছেলেটি দেয় না সাড়া:
ছেলেটিতো গেছে মরে।

[উৎসর্গ: মলয়রায় চৌধুরী ও জুয়েল মাজহারকে-যাঁদের অনুবাদের ভীষণ ভক্ত আমি]

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/নভেম্বর ০২,২০১৮)