যেকোনো কিছুর বিনিময়ে শিরোপা চায় বাংলাদেশ
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেয়ার পর সেমিতে ভারতের বিপক্ষে ‘অবিশ্বাস্য’ এক জয়ে ফাইনালে ওঠা। টানা তিন জয়ে ফুরফুরে মেজাজে যুবারা। জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে ট্রফিটা নিজেদের করে নিতে চায় লাল-সবুজের দল।
নেপালের আনফা কমপ্লেক্সে শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা পৌনে ৩টায় শিরোপার মঞ্চে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।
পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশও দ্বিতীয় শিরোপার স্বাদ পেতে উন্মুখ হয়ে আছে। অবশ্য দুটি দলেরই প্রথম শিরোপা এই টুর্নামেন্ট যখন অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ে ছিল সে আমলে।
ফাইনালে নামার আগে কঠিন প্রতিজ্ঞা ঝরেছে গোলকিপার মেহেদী হাসানের কণ্ঠে। যেকোনো মূল্যে ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরতে চান সেমিতে দুই ট্রাইব্রেক শট ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া এ কিপার, ‘ট্রফি জয় করে দেশে ফেরার সময় এখনই। পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে দেশবাসীকে গর্বিত করার জন্য আমরা সবকিছু করব। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হোক আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’
ভারতের বিপক্ষে সেমিতে শেষ সময়ে গোল করে সমতায় ফেরার পর টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের জয় পায় বাংলাদেশ। ভারতের নেয়া প্রথম দুটি শটই ঠেকিয়ে ম্যাচের নায়ক গোলকিপার মেহেদী। প্রতিশ্রুতির সঙ্গে পাকিস্তানের বিপক্ষেও অভয় দিচ্ছেন তিনি।
‘আগের তিনটা ম্যাচই আমরা জিতেছি। ভারতের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও জিতেছি। পাকিস্তান যেমন দলই হোক না কেনো, আমাদের মূল ফোকাস থাকবে এটা ফাইনাল ম্যাচ। আমাদের মনে একটাই বিষয় ফাইনাল। যে ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি, তাতে আশা করি আমরা চ্যাম্পিয়ন হবো।’
ভারত শক্তিশালী দল ছিল, পাকিস্তানও বেশ শক্তিশালী। তবে এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই বাংলাদেশ অধিনায়ক আরেক মেহেদী হাসানের, ‘পাকিস্তান খুব শক্তিশালী এবং আমাদেরকে সেভাবেই দেখতে হবে। যেকোনো মূল্যে আমরা জিততে চাই। কোচ যেভাবে শিখিয়েছেন, সেটা মাঠে অনুবাদ করতে পারলে আমরা জিতব। টানা তিনটা ম্যাচ জিতেছি; তবে পেছনের বিষয় ভেবে লাভ নেই। ফাইনালে সব নজর। জিততে হবে। ওরা শক্তিশালী, আমরাও কম না। ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে আমরা দুর্দান্ত লড়াই করে জয় পেয়েছি। যাই হোক আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নশিপ এবং আমাদের মনোযোগ সেদিকেই।’
খেলোয়াড়দের মতোই আত্মবিশ্বাসী লাল-সবুজদের কোচ মোস্তফা আনোয়ার পারভেজও। জানিয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে শতভাগ দিতে প্রস্তুত শিষ্যরা, ‘ছেলেরা ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলে ফাইনালে এসেছে। সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ছেলেদের। তাদের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ফাইনালে উঠেছে। আমরা যে কৌশলে, যেভাবে খেলতে বলেছি, সেভাবে খেলেছে। ফাইনালে শক্ত প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। আমরা ফাইনালকে ফাইনালের মতো করেই খেলব।’
‘তিন ম্যাচ অপরাজিত থাকাটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের বিষয়। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ১ গোলে পিছিয়ে থেকেও সমতা এনে টাইব্রেকারে জিতেছি। ছেলেরা সবাই উজ্জীবিত আছে এবং ফাইনালে শতভাগ দেয়ার জন্য প্রস্তুত। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী দল পাকিস্তান। ওদের ফুটবলারদের শারীরিক গঠন আমাদের চেয়ে ভালো। তাদের দুর্বলতা নিয়ে কাজ করছি।’ যোগ করেন বাংলাদেশ কোচ।
টুর্নামেন্টে শক্তির বিচারে এখন পর্যন্ত কাছাকাছি দুদল। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ করে অপরাজিত উভয়ই। বাংলাদেশ গোল করেছে ১২টি, খেয়েছে ২টি। অন্যদিকে পাকিস্তান দুই গোল কম করলেও (১০টি) খেয়েছে আবার একটি কম।
মালদ্বীপকে ৯-০ গোলে উড়িয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে ওঠার পর ভারতকে ট্রাইবেকারে হারিয়ে ফাইনালে লাল-সবুজরা।
সেখানে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতে ২-১ গোলে হারায় পাকিস্তান। পরের ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে তাদের জয় ৪-০ গোলের। আর সেমিফাইনালে স্বাগতিক নেপালকেও একই ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে তারা।
ফিফার নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন খেলা বাইরে ছিল পাকিস্তান ফুটবল দল। ফিরে এসেই চমকটা খারাপ দিচ্ছে না তারা। দলের পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি দেশটির ফুটবল ফেডারেশনও।
ফাইনালে ওঠার পরই পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের (পিএফএফ) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ফয়সাল সালেহ দলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘ছেলেরা পুরো জাতিকে গর্বিত করেছে। দীর্ঘদিনের বিরতির পর মাঠে নেমে কিশোররা একেবারে পেশাদারদের মতো পারফর্ম করেছে।’
ফাইনালের কথা উল্লেখ করে ফয়সাল বলেন, ‘আমি আশা করি, বাংলাদেশের বিপক্ষে সাউথ এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ এই ট্রফির ফাইনালে নিজেদের সেরাটা দেবে ছেলেরা। তারা ট্রফি জিতে ইতিহাসে নাম লেখাবে। এই কিশোররা যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে আশার আলো দেখছে পাকিস্তান ফুটবল।’
(দ্য রিপোর্ট.একেএমএম/নভেম্বর ০৩,২০১৮)