দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলাবস্থায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কাজ গুছিয়ে আনছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিলের কাজ শেষ করতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার (৩ নভেম্বর) কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ সভায় প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করার সুযোগ রেখে বিধিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় কমিশন সভা মুলতবি করা হয়েছে। একাধিক কারণে রোববার (৪ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা খুবই কম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোববার আবারও কমিশন সভায় বসবে। এতে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং ডিসেম্বরে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব।

তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ শেষ না হওয়ার আগে তফসিল ঘোষণা না করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। ওই চিঠির বিষয়ে শনিবার পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি সপ্তাহের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা ও ডিসেম্বরে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। শনিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে কমিশন বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।

ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, রেওয়াজ অনুযায়ী কমিশন সভায় তফসিল চূড়ান্তের পর একইদিন তা ঘোষণা করা হয়। ওইদিনই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তফসিলের বিষয়টি জানিয়ে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। তবে আজ তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এর কারণ হিসেবে তারা জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও)-এ সংশোধনীর পর ত্রুটি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ইভিএম বিধিমালা ও অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করার জন্য সময়ের প্রয়োজন। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংলাপ চলমান রয়েছে। তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রেও এ সংলাপকে নির্বাচনের গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি। যদিও বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সিইসি জানিয়েছিলেন, তফসিলের বিষয়ে রোববার সিদ্ধান্ত হবে।

ইসি সচিবালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষার্ধে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আজ রোববার তফসিল ঘোষণার মতো প্রস্তুতি ইসির নেই। কিছু কাজ এখনও রয়ে গেছে। তবে চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা হতে পারে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বুধবার পর্যন্ত সংলাপের বিষয়ে গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এসেছে। তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে এসব দিক বিবেচনায় রাখা হবে।

তারা আরও জানান, নির্বাচনে সব দল অংশ নিলে প্রচার ও ভোট সবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়। এতে নির্বাচন পরিচালনা করা ইসির জন্য সহজ হয়। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বলেন, সব দল অংশ নিলে প্রতিপক্ষের অভিযোগের ভয়ে সাধারণত প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে চলেন। সব দলকে নিয়ে নির্বাচন আয়োজনে ২০০৮ সালে তফসিল ঘোষণার পর কয়েক দফায় তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছিল বলে জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক যুগ্ম সচিব বলেন, আজ ৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল। তবে সেই অবস্থানে হয়তো ইসি নেই। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের সংলাপ বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। তবে আজ কমিশন সভায় বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে মঙ্গল অথবা বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

বিএনপির গঠনতন্ত্রের সংশোধন নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, তারা আদালতের নির্দেশনা হাতে পেয়েছেন। ইসিকে এক মাসের সময় দেয়া হয়েছে। এখনও সময় আছে। এ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিষয়টি কমিশন সভায় তোলা হবে। বিএনপির দলীয় প্রধান পদে দণ্ডিতরা থাকতে পারবেন কিনা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করিনি। যিনি রিট করেছেন তার আবেদন ও আদালতের রায় পেয়েছি। তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করার বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চিঠির প্রসঙ্গে সচিব বলেন, আমরা ঐক্যফ্রন্টের চিঠি এখনও পাইনি। এটা নির্বাচন ভবনে পৌঁছেছে কিনা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে সচিব হিসেবে আমি অবহিত হইনি, কমিশনও অবহিত হয়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি। চিঠি যদি এসে থাকে, তাহলে আগামীকাল (আজ) যে কমিশনের মুলতবি সভা রয়েছে সেখানে উপস্থাপন হবে।

সিইসি কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এবং কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/নভেম্বর ০৪, ২০১৮)